মাছে ভেজাল না দেওয়ার আহ্বান – প্রধানমন্ত্রীর

0
282
শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা

Sharing is caring!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মৎস্য সম্পদের বিপুল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে সামান্য মুনাফার লোভে মাছে ভেজাল না দিতে মৎস্য ব্যবসায়ী, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রফতানিতে সম্পৃক্তদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

- Advertisement -

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু কিছু মানুষের একটু ভেজাল দেবার প্রবণতা রয়েছে। এই ভেজাল দিয়ে বেশি মুনাফা করতে গিয়ে নিজের ব্যবসারও সর্বনাশ, দেশেরও সর্বনাশ করা হচ্ছে। এই সর্বনাশের পথে যেন কেউ না যায়। বিশেষ করে আমাদের মৎস্য ব্যবসায়ীরা।’

তিনি বলেন, ‘রফতানির ক্ষেত্রে সবসময় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যাতে কোনরকম অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে না আসে। মাছ চাষ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে আমি অনুরোধ করবো-সামান্য একটু মুনাফার লোভে নিজের ব্যবসাটাও যেমন নষ্ট করবেন না, তেমনি দেশের রফতানি বা পণ্যটাও আপনারা নষ্ট করবেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বুধবার (১৯ জুলাই) সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ মিলনায়তনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৭ উদযাপন উপলক্ষে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।

বর্তমানে দেশেও মাছের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে। আগে একজন রিকশাওয়ালা যেখানে শুধু চাল কিনতে সক্ষম ছিল, সে এখন একটু মাছও সাথে কিনতে পারে। একজন দিনমজুরের সক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য চাহিদাও বাড়বে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যত বাড়বে, আমাদের বাজারও ততটা বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

প্রধানন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেখলাম চিংড়ি রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি নেবে না। কেননা, চিংড়ি মাছের মধ্যে লোহা ঢুকিয়ে দিয়ে ওজন বাড়িয়ে সেটা রফতানি করা হয়। এটা যখনই ধরা পড়ে সাথে সাথেই চিংড়ি রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলে মৎস্য খাতের উন্নয়নের জন্য সেই সময় ৪০ কোটি টাকা এবং একটি কমিটি করে দেই। সেই টাকা দিয়ে প্রত্যেকটি হ্যাচারি উন্নত করা হয়। ধীরে ধীরে মানসম্পন্ন রফতানির মধ্য দিয়ে আবার মৎস্য রফতানি সচল হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী সায়েদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহমুদুল হাসান খান বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ১৩ জন মৎস্য চাষি এবং প্রতিষ্ঠানকে মৎস্যখাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেব স্বর্ণ ও রৌপ্য পদক প্রদান করেন। এদের মধ্যে ৪ জন স্বর্ণ এবং ৯ জন রৌপ্য পদক লাভ করেন। পদক ও সনদপত্রসহ নগদ ৫০ হাজার এবং ৩০ হাজার টাকার চেকও বিজয়ীদের প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।

আবহমানকাল থেকেই ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ বলেই আমাদের পরিচিতি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্ষা মৌসুমের বিশাল প্লাবনভূমি- যা স্বাদু পানির মাছের প্রধান প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্র। এছাড়াও রয়েছে বিশাল সমুদ্র। এই সমুদ্রে আরও যোগ হয়েছে মিয়ানমার ও ভারতের থেকে আইনি লড়াইয়ে অর্জিত গভীর সমুদ্রের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা। স্বাদু পানি এবং বিশাল এই সমুদ্র এলাকা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তথা মৎস্য আহরণ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কৃষিজ আয়ের ২৪ দশমিক ৪১ ভাগ আসে মৎস্য খাত থেকে এবং জিডিপিতে এ খাতের অবদান প্রায় ৩ দশমিক ৬১ ভাগ। তাছাড়া মাছ প্রাণিজ আমিষের ৬০ ভাগ যোগান দেয় ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এ খাতের বিশেষ অবদান উল্লেখযোগ্য।

দেশের মৎস্যসম্পদ রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের পদক্ষেপের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলমহালে সমাজভিত্তিক মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা, মৎস্য আবাসস্থল উন্নয়ন, প্লাবনভূমিতে মৎস্যচাষ ও অভয়াশ্রম স্থাপনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ এবং অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, গুণগত মানসম্পন্ন মাছের পোনা উৎপাদনের জন্যও যুগোপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। যার ফলে- ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত মৎস্য সেক্টরে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রায় ৪১ লাখ লোকের বাড়তি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। মৎস্যচাষী ও মৎস্যজীবীদের আয় ৩০ ভাগেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গোপসাগরে অর্জিত বিশাল জলসীমার সমস্ত মৎস্যসম্পদ জরিপ ও আহরণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ক্রয় করা হয়েছে ‘আর ভি মীন সন্ধানী’ নামে একটি আধুনিক গবেষণা ও জরিপ জাহাজ।

তিনি বলেন, আমরাই প্রথমবারের মত জেলেদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র প্রদানের কাজ শুরু করি যা এখন সফল সমাপ্তির পথে। এ পর্যন্ত ১৬ লাখ ২০ হাজার জেলেকে নিবন্ধনকরণ এবং ১৪ লাখ ২০ হাজার ১২৫ জন জেলেকে পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছে। ফলে তাদের জন্য প্রদত্ত সরকারের বিভিন্ন সহায়তা ও প্রণোদনা প্রকৃত জেলেদের হাতে পৌঁছে দেওয়া সহজতর হবে।

প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ও বনাঞ্চল রক্ষা, পানি সম্পদের উন্নয়ন ও নদীতে নাব্যতা রক্ষার জন্য তাঁর সরকার ইতোমধ্যে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে মধুমতি, গড়াই, যমুনা, বুড়িগঙ্গা, কুশিয়ারা প্রভৃতি নদীতে নাব্যতা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। মধুমতি ও গড়াই নদী খননের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। লবণাক্ততা হ্রাস পেয়েছে। রক্ষা পাচ্ছে সুন্দরবনসহ আশেপাশের জীববৈচিত্র্য।

মৎস্যজীবীদের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন কল্যাণমূলক পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে তাঁর সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বিপন্নপ্রায় মৎস্য প্রজাতির সংরক্ষণ, প্রজনন ও বংশ বিস্তারের জন্য মুক্ত জলাশয়ে অভয়াশ্রম স্থাপন ও এর সংরক্ষণে দেশের মৎস্যখাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে আরও তৎপর হবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী গণভবনের লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন।

সূত্র : বাসস।

(Visited 6 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here