প্রথম উচ্চ প্রযুক্তির জাহাজ রপ্তানি করলো বাংলাদেশ।।

0
280

Sharing is caring!

শাহ আমানত সেতুর উজানে কর্ণফুলী নদীতে নোঙর করে রাখা জাহাজটির সামনে একটি বার্জের ওপর দাঁড়িয়ে ফিতা কেটে এটি উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী। ‘অফশোর পেট্রোল ভেসেল’ হিসেবে পরিচিত বিশেষায়িত এই জাহাজটির নাম ‘দরিয়া’।

- Advertisement -

কেনিয়ায় রপ্তানির জন্য চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডে প্রায় দেড় শ কোটি টাকা রপ্তানিমূল্যের একটি উচ্চপ্রযুক্তির জাহাজ নির্মাণ করা হয়েছে। রপ্তানির আগে গতকাল রোববার দুপুরে জাহাজটির ‘ইয়ার্ড ডেলিভারি’ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

জাহাজটি উদ্বোধন করতে অর্থমন্ত্রী গতকাল সকালে পতেঙ্গায় বোটক্লাব থেকে প্রমোদতরি ওয়েস্টার্ন ক্রুজে চড়ে শাহ আমানত সেতুর উজানে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের সামনে যান। এ সময় তিনি প্রমোদতরি থেকে নেমে জাহাজ নির্মাণ কারখানাটি ঘুরে দেখেন। পরে আবার প্রমোদতরিতে ফিরে এসে জাহাজ রপ্তানির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

ছোট আকারের হলেও জাহাজটির রপ্তানি মূল্য ১৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। এর আগে সাধারণত পণ্যবাহী জাহাজগুলোর সর্বোচ্চ রপ্তানিমূল্য ছিল প্রায় ৮০ কোটি টাকা। ২০১৪ সালের আগস্টে নির্মাণ শুরু হওয়া জাহাজটি এ মাসেই কেনিয়ার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়বে। এটি রপ্তানির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো উচ্চপ্রযুক্তির জাহাজ নির্মাণের বাজারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জাহাজ নির্মাণের ঐতিহ্য ছিল আমাদের। সেই গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য আবার ফিরে এসেছে। ওয়েস্টার্ন মেরিন এখন দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩৫টি জাহাজ নির্মাণ করছে, যা গৌরবের।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ খাত জাহাজনির্মাণ শিল্প। এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে ‘বন্ডেড ওয়্যারহাউস’ (শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি সুবিধা) সুবিধা দেওয়া হয়েছে। নগদ সহায়তাও কিছুটা দেওয়া হচ্ছে। এটা অব্যাহত রাখা হবে।

সুশাসনের অভাবে বিনিয়োগ স্থবিরতা চলছে কি না—সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিনিয়োগ সাধারণ ব্যাপার নয়। আপনি দেশে মারামারি কাটাকাটি করবেন। হরতাল করবেন। দোকান ভাঙবেন। পুড়বেন মানুষকে। সেখানে বিনিয়োগ কী করে হয়। ২০১৫ সাল থেকে আমরা অবশ্য এটা করছি না। লোকের বিশ্বাস করতে সময় লাগে। এ মুহূর্তে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগের হার যথেষ্ট ঊর্ধ্বগতি।’

অনুষ্ঠানে জাহাজটি সম্পর্কে নানা তথ্য দেওয়া হয়। যেমন জাহাজটি ঘণ্টায় চলবে ৩৬ নটিক্যাল মাইল গতিতে। সড়কের গতির সঙ্গে তুলনা করলে এই গতিবেগ দাঁড়ায় ঘণ্টায় প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজের ঘণ্টায় গতিবেগ থাকে ১২ নটিক্যাল মাইল। এই জাহাজে রয়েছে দ্রুতগতির ‘ওয়াটারজেট’ ইঞ্জিন। মূল ইঞ্জিনসহ ইঞ্জিনের ক্ষমতা ১০ হাজার ৭২০ কিলোওয়াট। জাহাজটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৪ মিটার। প্রস্থ সাড়ে ৮ মিটার। এতে ৩৬ জন নাবিকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান সায়ফুল ইসলাম বলেন, মন্দার কারণে বিশ্বের জাহাজনির্মাণ শিল্পে অস্থিরতা চলছে। সারা বিশ্বের ৩০ শতাংশ জাহাজনির্মাণ প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে গেছে। সেখানে ওয়েস্টার্ন মেরিন এখন অনেক জাহাজ তৈরি করছে। শ্রমঘন, পুঁজিঘন, উচ্চপ্রযুক্তির ও ভারী এই শিল্পকে দীর্ঘ মেয়াদে নীতি সহায়তা দেওয়া দরকার।

ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই জাহাজটি নির্মাণে বিশ্বের ২৫টি দেশ থেকে উচ্চপ্রযুক্তির যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়েছে। জাহাজে যেসব তার ব্যবহার করা হয়েছে তা লম্বালম্বিভাবে রাখা হলে দৈর্ঘ্য হবে ৪০ কিলোমিটার। জাহাজটিতে রয়েছে হেলিপ্যাড। জাহাজটি নির্মাণের সময় মান তদারকি করেছে ফ্রান্সভিত্তিক ব্যুরো ভেরিতাস। ডেনর্মাকের জেজিএইচ মেরিন এ/এস কোম্পানির মাধ্যমে এটি কেনিয়ার মৎস্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে। জাহাজটি মূলত কেনিয়ার সমুদ্র এলাকায় মাছ ধরার ট্রলারগুলোতে নিরাপত্তা তদারকিতে ব্যবহৃত হবে।

(Visited 70 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here