বরিশালের ঐতিহ্যবাহী জেল খাল ফের ময়লার ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে

0
526
বরিশালের ঐতিহ্যবাহী জেল খাল ফের ময়লার ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে ।।

Sharing is caring!

জাকারিয়া আলম দিপুঃ

বাংলার প্রাচ্যের ভেনিস ক্ষ্যাত বরিশাল নগরীর ‘লাইফ লাইন’ হিসাবে পরিচিত জেল খালটি ফের  ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। গত বছর ৩ই সেপ্টেম্বর দখলদারদের থাবায় মৃত প্রায় এই খালটি উদ্ধার অভিযান চালিয়েছিল জেলা প্রশাসন।নগরবাসী স্বপ্ন দেখেছিল  ঐতিহ্যবাহী এ খালের দু’পড়ে বহির্বিশ্বের আদলে গড়া হবে একটি ইকোপার্ক। যার দু’পাশে ফুল আর বাহারী গাছের বাগান এবং খালের বুক চিড়ে পুনরায় বহনকারী গয়না নৌকা  চলার দৃশ্য।

- Advertisement -

নগরীর পাশ্ববর্তী এলাকায় পণ্য পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম ছিল এ খালটি আবার তার যৌবন ফিরে পাবে।কিন্তু সাবেক জেলা প্রশাসক ডঃ গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান কিছু উদ্যোগ ও আশার কথা শুনালেও, বতমান জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান জেল খাল রক্ষার জন্য কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। ফলে জেল খালটি ফের  ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

জেল খালের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পর সকল ধরনের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে খালের আশেপাশের বাসিন্দারা আবারও তাদের বাসাবাড়ির ময়লা আর্বজনা খালে ফেলতে শুরু করেছে।পাশাপাশি একাংশের পুরোটাই দখল করে ঘর বাড়িসহ নানা স্থাপনা তৈরি করে দখলদাররা। । যার ফলে স্বপ্নের জেল খালের স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে শুরু করেছে। জেল খালের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের সাথে যারাই যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যে এক প্রকারের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আশা হারিয়ে  ঐ মানুষগুলো। তারা ধারনা করছিল, জেলা প্রশাসকের এই উদ্যোগ জনগনের স্বর্তস্ফুর্ত অংশগ্রহনের এই জেল খাল তার পুরনো যৌবন ফিরে যাবে? খালের আশে পাশের বসবাসকারীরা এই খালটির গুরুত্বটা বুঝতে চেষ্টা করছে না? তাছাড়া জেল খালে বাসাবাড়ির সুয়ারেজের লাইন দেয়া ও ময়লা আর্বজনা ফেলার কারনে খালের পারে অনেক বাসিন্দাদের জরিমানাও করে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত। তারপরেও তাদের ময়লা আর্বজনা ফেলা কমেনি।

খালটি খননের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দেরও আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন তার পরিকল্পনা দাখিল করতে না পারায় মেলেনি।সাবেক জেলা প্রশাসক কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে পুনরায় খাল খনন করলে কিছু দিন পর আবার কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারি বরাদ্দের অভাবে ও সঠিক তত্ত্বাবধান এবং জনসচেতনতা না থাকায় ঐতিহ্যবাহী এ জেল খাল আবারো  ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের খালটি সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে থাকলেও সিটি কর্পোরেশন বা সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় জেলা প্রশাসনের পক্ষে খালটিকে বহমান করে তোলা দুরূহ হয়ে দাড়িয়েছে।

নগরবাসীর মতে, খালটিকে জেলা প্রশাসন বাঁচানোর চেষ্টা করলেও তা সংরক্ষণ করে দীর্ঘ মেয়াদী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় পুনরায় অচল হয়ে পড়েছে। নগরীর নাজিরের পুল এলাকার মাছ ব্যবসায়ী ইউনুস মিয়া জানান, ডিসি স্যার খালটি উদ্ধারের উদ্যোগ নিলেও পুনরায় খালের দুই পাড়ের লোকজন ময়লা আর্বজনা ফেলে তা আবার ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করেছে। মানুষ সচেতন না হলে খালটি বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।

 উল্লেখ্য, বরিশাল জেলা প্রশাসন পরিচালিত সমস্যা-সম্ভাবনা ফেইসবুক পেজে বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী জেল খাল দখল মুক্ত এবং এর পূনরুদ্ধারের পাশাপাশি খননের দাবী জানিয়ে পোষ্ট করা হয়। পোষ্টটির প্রতি একাত্ততা প্রকাশ করে বহু ফেইসবুক উইচার কমেন্ট্স করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল সাবেক জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান খালটি পূণরুদ্ধারের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে পত্র লেখেন। সেই থেকেই জেলা প্রশাসন এবং সিটি কর্পোরেশন যৌথ উদ্যোগে খাল উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।

শুধু তাই নয়, সমস্যা ও সম্ভাবনা নামক ফেইসবুকে’র আহ্বানে ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বরিশালের আপামর জনতা জেল খালটি উদ্ধার অভিযানে একাত্ততা প্রকাশ করে ঝাপিয়ে পড়ে।

জেলা প্রশাসন এবং সিটি কর্পোরেশন যৌথ উদ্যোগে, নগরীর নথুল্লাবাদ থেকে কীর্তনখোলা নদী পর্যন্ত জেল খালের দৈর্ঘ্য ৩.২ কিলোমিটার। প্রতি ১০০ মিটার করে একেকটি ব্লক চিহ্নিত করে ৩০টি খন্ড সুচিহ্নিত করে দৃশ্যমান নম্বর প্লেট এর মাধ্যমে এই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল। এছাড়াও প্রতিটি খন্ডে একেকটি দলকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর শনিবার সবক’টি দল মিলিয়ে অর্ধ লক্ষের বেশি সচেতন মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। পরিচ্ছন্নতা অভিযানের প্রত্যেক দশটি দলের একেকটি গুচ্ছের দায়িত্বে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পর্যায়ের একেক জন কর্মকর্তা সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তাছাড়াও তার সাথে জেলা প্রশাসনের এক জন নির্বাহী হাকিম এক জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও জেল খাল পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ছিলো ৩০টি নৌকা, স্পীডবোট এবং তিনটি মোবাইল কোর্ট। ৩০টি খন্ডের প্রত্যেক খন্ডে সিটি কর্পোরেশনের ৫ জন করে পরিচ্ছন্নতা কর্মী সহযোগিতায় ছিলেন। এদিকে ঢাক ঢোল পিটিয়ে, পথ নাটক, গানে গানে মুখরিত ছিলো খাল পাড়ের সড়কগুলো। সেদিন ঐতিহ্যবাহী জেল খালটি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কাজে স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ করে বরিশালের বুকে ইতিহাস রচনা করেন হাজার হাজার স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের লোকেরা, শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকল বয়সী মানুষের অংশগ্রহণ ছিল বেশ চোখে পড়ার মত। । জেলা প্রশাসনের এ পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেশের সর্বত্র ব্যাপক প্রশংসিত হয়।

 

(Visited 10 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here