সাবধান! অনলাইনে ব্ল্যাকমেইল এখন চরম রমরমা

0
455

Sharing is caring!

কলামিস্টঃ আর.এম।।।

- Advertisement -

নেট দুনিয়ায় পরিচয়ের মাধ্যমে যেমন বন্ধুতা থেকে শুরু করে প্রেম, বিয়ে হচ্ছে। মানবিক সাহায্য-সহযোগিতার ঘটনা ঘটছে। তেমনি ঘটছে নানা ধরনের ব্ল্যাকমেইল, হুমকি-ধমকির ঘটনা। দেশের  বিপুল মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবে সক্রিয়। এই মাধ্যমটাকেই কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণির প্রতারক। এরকম অনেক অভিযোগ কাউন্টার টেরোরিজমের সাইবার ক্রাইম বিভাগে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অনেককে। তবুও থামছে না অপরাধ। একের পর এক ঘটেই চলেছে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন মেয়েরা।
রাইসা হক (ছদ্মনাম)। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী। মা-বাবার সঙ্গে থাকেন খিলক্ষেতের নিকুঞ্জে। লেখাপড়া ও পারিবারিক কাজ ছাড়া বাইরে যান না তেমন। অবসরে ইন্টারনেটে সময় কাটান। ফেসবুকে বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট করেন। এভাবেই একসময় ভালো বন্ধুতা গড়ে উঠে শরীফুল ইসলাম দীপু নামে এক যুবকের সঙ্গে। বন্ধুতা থেকে একসময় দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সুযোগ পেলেই দীপুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাইরে বের হতেন রাইসা। ঘুরে বেড়াতেন বিভিন্নস্থানে। সূত্রে জানা গেছে, গত বছর একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব আসছিল রাইসার। পরিবার থেকেও বিয়ে করার চাপ। নানাভাবে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন দীপুর সঙ্গে। দীপুকে বিয়ে করতে বলেন তিনি। কিন্তু নানা অজুহাতে এখন বিয়ে করা সম্ভব না বলে জানিয়ে দেন দীপু। এরমধ্যেই গত বছরের ১৯শে আগস্ট অন্যত্র বিয়ে হয় রাইসার। তারপরই ঘটে ঘটনা। সংসার জীবনের শুরুতেই ঘটে অনভিপ্রেত ঘটনা। রাইসার স্বামীর মোবাইলফোনে একটি ক্ষুদেবার্তা। এতে জানিয়ে দেয়া হয় রাইসার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। শারীরিক সম্পর্কও ছিল তাদের। এরকম ছবি ও ভিডিও রয়েছে। এই ক্ষুদেবার্তার পর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর প্রতি সন্দেহের দৃষ্টি পড়ে স্বামীর। দাম্পত্য জীবনের সুখ অনুভব করার আগেই ঝড় শুরু হয়। কিন্তু ওই ক্ষুদেবার্তার কোনো রিপ্লে দিচ্ছিলেন না রাইসার স্বামী। তারপর আরো ক্ষুদেবার্তা। একটি বার্তার লেখা হয়েছে ‘আপনার বউ’র ভিডিওটা যে কতো বিউটিফুল তা শুধু আপনি আমি দেখলে হবে? আপনার অফিসের লোকদেরও দেখাতে হবে। মিউচ্যুয়ালে আসতে পারেন।’
এবার রাইসার স্বামীর হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তায় সরাসরি চাঁদা দাবি করেন দীপু। ‘মিউচ্যুয়ালে আসেন। জাস্ট ১ লাখ।’ টাকা না দিলে ভিডিওটি অন্যত্র বিক্রি করে দেবে জানিয়ে দীপু লিখেছেন, ‘কেউ কিনে নিলে ১ লাখ। সো আই এগ্রি উইথ হিম।’ নতুন সংসার তখন ভাঙে প্রায়। ডিভোর্স হয়ে যাবে অবস্থা। বিষয়টি কাছের স্বজনরাও জেনে যান। রাইসার স্বামী সবসময় আতঙ্কে থাকেন। তার মান-সম্মান বুঝি গেল।
রাইসা স্বামীকে সব খুলে বলেন। দীপু নামের এই ছেলের সঙ্গে ছিল তার প্রেমের সম্পর্ক। শারীরিক কোনো সম্পর্ক হয়নি তাদের। কিন্তু তা বিশ্বাস করেন না রাইসার স্বামী। রাইসা জানান, দীপুর সঙ্গে এমন কিছু ঘটেনি যা আপত্তিকর। এরকম ছবিও নেই। ভিডিও আসবে কিভাবে। এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করেন রাইসা। তারপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নেন এই দম্পতি। গত বছরের ৭ই সেপ্টেম্বর তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করেন। মামলার পরপরই গ্রেপ্তার করা হয় শরীফুল ইসলাম দীপুকে। আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে রিমান্ডে চান তদন্তকারী কর্মকর্তা। তিন দিনের জিজ্ঞাসাবাদে রিমান্ডে দীপু জানান, তার কাছে কোনো ভিডিও নেই। প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভে তিনি হুমকি দিচ্ছিলেন। দীপু চাননি রাইসার অন্যত্র বিয়ে হোক। শরীফুল ইসলাম দীপুর বাড়ি গাইবান্ধা। তিনি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
এইভাবে মোবাইলফোন হারিয়ে প্রতারকের খপ্পরে পড়েছিলেন একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রুনা পারভিন। ধানমন্ডির দুই নম্বর সড়কে প্রায় তিন মাস আগে ফোনটি হারিয়ে যায়। ওই ফোনে তার কিছু একান্তই ব্যক্তিগত ছবি ছিল। ফোনটি হারানোর কিছুদিন পরেই একটি ফেসবুক আইডি থেকে ক্ষুদেবার্তা। আপত্তিকর প্রস্তাব। বিরক্ত হয়ে আইডি ব্লক করেন রুনা। পরে অন্য একটি আইডি থেকে রুনার একটি ছবি সেন্ট করা হয়। রুনা এবার বাধ্য হয়েই চ্যাট করেন তার সঙ্গে। অনুরোধ করেন ছবি ডিলিট করতে। এরমধ্যেই ওই আইডি থেকে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। টাকা দিলেই ছবিগুলো ডিলিট করা হবে। নতুবা ছবিগুলো ভাইরাল হয়ে যাবে। ফেসবুকে, ইউটিউবে ছড়িয়ে দেয়া হবে নানাভাবে। তারপর  থেকে ঘুম নেই রুনার চোখে। ভয়ে একটি বিকাশ নম্বরে পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়ে আরো টাকা পরে  দেবেন বলে জানান। এভাবে প্রায়ই টাকা পাঠাতে হতো রুনাকে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি সহযোগিতা নেন কাউন্টার টেরোরিজমের সাইবার ক্রাইম বিভাগের। গ্রেপ্তার করা হয় রাজীব নামে এক যুবককে। তদন্তে দেখা গেছে, হারানো মোবাইলফোনটি রাজীবের কাছে বিক্রি করেছিলো এক রিকশাচালক। রুনার সঙ্গে রাজীব চ্যাট করলেও চাঁদাবাজি রাজীব করেননি। ওই সময়ে রাজীবের আইডি হ্যাক করে চাঁদাবাজি-ব্ল্যাকমেইল করেছে বরিশাল সদরের কালুশাহ রোডের আমান নামের এক যুবক। গ্রেপ্তার করা হয় তাকেও। গত এপ্রিলে আদালতে এ বিষয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে আমান।
এসব বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজমের সাইবার ক্রাইম বিভাগের পরিদর্শক শওকত আলী সরকার বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামিদের গ্রেপ্তার করেছি। অপরাধীরা আদালতে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। তবে ভিকটিমরা সামাজিকতার কারণে মামলা করতে চান না বলে জানান তিনি।

আমাদের উচিৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহারের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হওয়া।

(Visited 13 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here