মাথায় হাত নগরবাসীর : হোল্ডিং ট্যাক্স বেড়েছে ৩ থেকে ১০ গুণ

0
380

Sharing is caring!

রাজধানীর বাসিন্দাদের বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ক্ষেত্র বিশেষে ট্যাক্স বাড়ানোর হার তিন থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত। এতে বিপাকে পড়েছেন নগরীর বাসিন্দারা। উপায় খুঁজতে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসগুলোতে ধরনা দিচ্ছেন তারা। বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন ট্যাক্স বাড়ানোর হার অস্বাভাবিক। সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে এ ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। এতে ঘরভাড়া বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে। সৃষ্টি হবে বিশৃঙ্খলা। তারা অবিলম্বে ট্যাক্স কমানোর দাবি জানিয়েছেন।

- Advertisement -

ঢাকা দক্ষিণের ৩৪/৭, উত্তর বাসাবোর বাসিন্দা আজমল আলী ফরহাদ নয়া দিগন্তকে জানান, ২০১০ সালে তাদের বাসার সর্বশেষ ট্যাক্স ধার্য করা হয়েছিল। সে সময় ট্যাক্স ধরা হয় ১৮ হাজার টাকা। কিন্তু এবার ট্যাক্স ধরা হয়েছে ৬০ হাজার ৭২০ টাকা। অর্থাৎ সাত বছরে তার ট্যাক্স বেড়েছে সাড়ে ৪২ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ট্যাক্স ধার্য করার আগে শুধু আমাদের বাড়ির চারপাশে একবার মাফজোখ করেছিল সিটি করপোরেশনের লোক। এ ছাড়া তারা আর কিছুই করেনি। আমাদের কাছেও কিছু জিজ্ঞেস করেনি। ঘরে বসে এটা তৈরি করেছে। এখন দেখছি মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা। একবারে এত টাকা বাড়িয়ে আমাদের ওপর জুলুম করা হয়েছে। বিষয়টি মেয়রের দেখা উচিত।

শান্তিনগরের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগে আমাদের হোল্ডিং ট্যাক্স ছিল ১০ হাজার টাকা। এবার ধার্য করা হয়েছে ৯৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রায় ১০ গুণ বাড়ানো হয়েছে ট্যাক্স। তিনি বলেন, এক দিকে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম বাড়ছে। সামনে আরো বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। চাল-ডাল থেকে সবকিছুর দামই বাড়তি হয়ে গেছে। তার ওপর এভাবে ট্যাক্স বাড়ানোর কারণে এখন আমাদেরও ভাড়াটিয়াদের ভাড়া বাড়িয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া উপায় নেই।

আরামবাগ এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, সিটি করপোরেশন অনেক গুণ ট্যাক্স বাড়িয়েছে, যা পরিশোধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন আবেদন করলে কিছু কমিয়ে দেয়। কিন্তু যা বাকি থাকবে তার পরিমাণও অনেক। এ কারণে অনেকে আদালতে মামলার কথাও চিন্তা করছেন।

জানা যায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নাগরিকদের হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়াতে বছর খানেক আগে তৎপরতা শুরু করে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অঞ্চল-২ ও অঞ্চল-৪ এবং উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল-১ ও অঞ্চল-৩ এলাকায় নতুন করে ট্যাক্স ধার্য করা হয়। এ সময় দুই সিটি করপোরেশনের মাঠ পর্যায়ে কাজ করা উপকর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে।

এর মধ্যে গত ২ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উপকর কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জমাদ্দার সার্কুলার রোডের (ভূতের গলি) এক বাসা থেকে ঘুষ নেয়ার সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে হাতেনাতে ধরাও পড়েন। তা ছাড়া গত বছরের ৮ আগস্ট ট্যাক্স বাড়ানোর বৈধতা নিয়ে দুই সিটির দুইজন বাসিন্দা আদালতে রিটও করেন।

এতে আদালত ট্যাক্স বাড়ানোর প্রক্রিয়া স্থগিত রাখেন। এর এক বছর পর সর্বশেষ গত ৭ আগস্ট আদালতের এক আদেশে এ স্থগিতাদেশ উঠে যায়। এরপর নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। উত্তর সিটি করপোরেশন তাদের দুইটি অঞ্চলের কাজ আগেই শেষ করেছে। এখন তারা নতুন করে বাকি তিনটি অঞ্চলে ট্যাক্স নির্ধারণের কাজ শুরু করেছে। একইভাবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তাদের দুইটি অঞ্চলের ট্যাক্স নির্ধারণের কার্যক্রম শেষ করলেও নাগরিকদের কাছে চিঠি পাঠানো বন্ধ ছিল। স্থগিতাদেশ উঠে যাওয়ার পর এখন তারা বাসিন্দাদের কাছে চিঠি পাঠানো শুরু করেছে। আর এ চিঠি হাতে পেয়ে মাথায় হাত পড়েছে নাগরিকদের।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অঞ্চল-২ এর কর কর্মকর্তা দেওয়ান আলীম আল রাজী নয়া দিগন্তকে বলেন, চিঠি ইস্যু হওয়ার পর অনেকেই অফিসে আসছেন। তারা অভিযোগ করছেন বেশি ট্যাক্স ধার্য করা হয়েছে বলে অনেকে রাগারাগিও করছেন। তবে তাদের জন্য সুযোগ রাখা হয়েছে। আবেদন করলে কাউন্সিলদের নিয়ে গঠিত এ সংক্রান্ত বোর্ড বিষয়টি পর্যালোচনা করে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ ট্যাক্স কমিয়ে দিতে পারবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো: সাইদুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, অনেকের হোল্ডিং ট্যাক্স দীর্ঘদিন সমতা করা হয় না। এ কারণে তাদের বেশি ধার্য হয়ে থাকতে পারে। তা ছাড়া অনেক সময় আবেদন করার পর ট্যাক্সের পরিমাণ কমে যায়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রবীন্দ্র শ্রী বড়–য়া নয়া দিগন্তকে বলেন, দীর্ঘদিন ট্যাক্স না বাড়ানোর কারণে পাশাপাশি দুইটি ভবনের ট্যাক্সের পার্থক্য তৈরি হয়। এ পার্থক্য দূর করতে ট্যাক্স সমতাকরণ করা হয়েছে। এতে দীর্ঘদিন ট্যাক্স সমতা না করা বাসিন্দাদের ট্যাক্স বেশি বেড়েছে। আবার যাদের কিছুদিন আগে ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছিল তাদের বেশি বাড়েনি।

(Visited 6 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here