হঠাৎ কেন রাশিয়ামুখী সৌদি আরব?

0
365

Sharing is caring!

- Advertisement -

সৌদি আরব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতা সর্বজন বিদিত। এই সম্পর্কের ইতোমধ্যে ৭০ বছর পূর্তি হয়েছে। দীর্ঘ এই সময়টাতে রাশিয়ার সঙ্গে মধ্যপ্রচ্যের প্রভাবশালী সৌদি আরবের প্রকাশ্য শত্রুতা না

থাকলেও মিত্রতার আভাস ছিল না।

কিন্তু, সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের সম্প্রতি মস্কো সফর একটি বার্তা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সেটিকে রাজনৈতিক বোদ্ধারা সৌদি আরবের ওপর মার্কিন প্রভাবের ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।

বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ও আন্তর্জাতিক তেলবাজারের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মামদূহ সারামেহ রাশিয়ান সংবাদ মাধ্যম আরটি’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এমন ইঙ্গিত দিচ্ছেন, রিয়াদ তার পররাষ্ট্রনীতিতে বৈচিত্র্য নিয়ে আসছে। সৌদি আরব শুধু এক ঝুড়িতেই তার সব ডিম তা দিতে চাচ্ছে না!

গত বৃহস্পতিবার দু’দিনের ঐতিহাসিক সফরে মস্কো যান সৌদি বাদশাহ সালমান। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদভসহ রুশ-সৌদি ব্যবসায়িক নেত্রীবৃন্দের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন তিনি।

এটিকে একটি ঐতিহাসিক সফর হিসেবে মনে করা হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে মানুষের দৃষ্টি ছিল এই সফরের দিকে। সফরে কয়েকটি বিষয় আলোচনার টেবিলে ছিল, যেগুলোর মধ্যে সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধ, তেল রপ্তানি, মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট, ইরান ও কাতার।

আর রাশিয়া থেকে অস্ত্র ক্রয়ের বিষয়টি তো রয়েছেই। সে বিষয়ে অবশ্য সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো রাখঢাক করেননি।

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল বিন আহমেদ আল জুবায়ের আরটি এরাবিককে বলেন, ‘রাশিয়া থেকে সৌদির অস্ত্র না কেনার তো কোনো কারণ নেই। রিয়াদে অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে মস্কোকে ঠেকানোরও কেউ নেই।’

সৌদি মালিকানাধীন আল অ্যারাবিয়া টেলিভিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার কাছ থেকে থাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি নিচ্ছে সৌদি আরব। দূরপাল্লার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে এই প্রযুক্তি বসানো হয়।

এছাড়া সৌদি আরব সব সময় বিকল্প জ্বালানি খুঁজছিল। সেজন্য নিউক্লিয়ার রিএক্টর তৈরিতে রাশিয়ার সাহায্য নেবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সৌদি আরবে নিউক্লিয়ার রিএক্টর তৈরির পরিকল্পনা করেছি।’

তবে তিনি আশ্বস্ত করেন, এটি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কাজেই ব্যবহার করা হবে।

সৌদি-রাশিয়া সম্পর্কে কি প্রভাব ফেলবে এই সফর সে বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ও অর্থনীতিবিদ মামদূহ সালামেহ মনে করেন, এটি দুটি দেশের পারস্পরিক সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

১৯৩২ সালে সৌদি আরব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই প্রথম কোনো বাদশাহ রাশিয়া সফরে আসলেন। রাশিয়া ও সৌদি আরব হচ্ছে, বিশ্বের প্রধান দুটি তেল রপ্তানিকারক দেশ। বৈশ্বিক তেলবাজারে জোয়ার বা ধস নামিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে দেশ দুটির।

জ্বালানিখাতে বেশ কয়েকটি বড় চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে দুটি দেশের মধ্যে। সৌদির জ্বালানি, শিল্প ও খনিজ সম্পদমন্ত্রী খালিদ বিন আবদুল আজিজ আল ফালিহ জানান, বেসরকারি খাতে দুই হাজার মাইনিং লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই খনিজ সম্পদ বিভাগে রাশিয়া সৌদি আরবকে সহায়তা প্রদান করবে।

দু’দেশের মধ্যেকার এই সম্পর্ক সিরিয়া সঙ্কট নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন মামদূহ সালামেহ।

এছাড়া রাশিয়া ও সৌদির মধ্যে উষ্ণ সম্পর্কের সম্ভাবনার বীজ বপন করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার কিছুটা শীতল সম্পর্ক। বিভিন্ন স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধ বা পার্থক্য না দেখালেও তাদের মধ্যে কিছু বিষয়ে তিক্ততা রয়েছে।

সৌদি বাদশাহর রাশিয়া সফরের মাধ্যমে এই ইঙ্গিত স্পষ্ট, তারা শুধু এক ঝুড়িতেই সব ডিমের তা দেবে না।

রাশিয়া ও সৌদি আরবের মধ্যেকার সম্পর্কের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহাসিক উদাহরণ হচ্ছে, ১৯২৬ সালে নতুন সৃষ্ট সৌদি প্রজাতন্ত্রকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সোভিয়েত ইউনিয়ন।

(Visited 19 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here