৩৭ শিক্ষার্থীর জামিনে ‘ঈদের খুশি’ পরিবারে

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন

0
308

Sharing is caring!

সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটির বিবিএ’র ছাত্র ইকতিদার হোসাইন অয়নের বাবা এবাদত হোসেন তালুকদারের চোখে আনন্দাশ্রু। আদালত এলাকা থেকেই ছেলের জামিন পাওয়ায় খুশির খবর মোবাইল ফোনে জানাচ্ছিলেন স্বজনদের। এরপরই ছেলেকে মুক্ত করতে ছুটে গেলেন কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে। শুধু অনয় নন, রোববার ঢাকার তিনটি আদালতে ৩৭ শিক্ষার্থী জামিন পেয়েছেন।

- Advertisement -

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও ভাংচুরের অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। এখন নতুন মামলায় গ্রেফতার না দেখালে জামিনপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মুক্তিতে কোনো বাধা নেই। আর এক দিনে ৩৭ শিক্ষার্থীর জামিনে তাদের পরিবার ও স্বজনের মধ্যে ‘ঈদের খুশি’ ছড়িয়ে পড়ে।

ঢাকার থানা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে- আন্দোলনের সময় সংঘাত, ভাঙচুর, উসকানি ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ এ পর্যন্ত ৫১টি মামলায় ৯৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে ৫২ জন শিক্ষার্থী।

পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের ডিসি আনিসুর রহমান  বলেন, বুধবার ৩৭ শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে জামিন আবেদন করা হয়। তারা সবাই জামিনও পেয়েছেন।

কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুব আলম  বলেন, শিক্ষার্থীদের জামিন সংক্রান্ত কাগজপত্র পাওয়ার পরপরই তাকে মুক্তি দেওয়া হবে।

বাড্ডার থানার মামলায় গ্রেফতার মেহেদী হাসানের জামিনের সংবাদ শুনে তার বাবা এম এ মাসুদ খান আদালতের বারান্দায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আজ আমার আনন্দের দিন। ছেলে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে পরিবারের সবাই ভেঙে পড়ছিল। ঈদের আগে ছেলে জামিন পাওয়ায় আমরা খুশি।’

জাহিদুল হক নামে এক শিক্ষার্থীর জামিন পাওয়ার পর তাদের বোন জাফরিন হকের খুশি ছিল দেখার মতো। জাফরিন চিৎকার বলে বলছিলেন- ‘ভাইয়ার জামিন হয়েছে। ভাইয়াকে এখন মুক্ত করতে পারব।’ এরপরই আদালত এলাকায় আনন্দে কেঁদে ফেলেন জাফরিন। শিক্ষার্থীদের জামিন শুনানির দিন ধার্য থাকায় গতকাল সকাল থেকে আদালত চত্বরে হাজির হন তাদের স্বজন ও সহপাঠীরা। একে একে তারা জামিন লাভের পর সহপাঠীরা সেখানে উল্লাস প্রকাশ করেন। অনেকে ‘ভি’ চিহ্ন দেখান।

ধানমন্ডির মামলায় গ্রেফতার হন দুই ভাই মাহমুদুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান। মাহমুদ পড়েন ইউল্যাবে। আর মাহবুব বিএফ শাহীন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। বো সাড়ে ১১টার দিকে জামিন হওয়ার খবর শুনেই তাদের স্বজনরা বলেন, ‘দুই ভাইয়ের জামিন হয়েছে। এতে তারা আমরা খুশি। এক সঙ্গে ঈদ করা যাবে। ‘

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরো এবং ঢাকা মহানগর হাকিম এ কে এম মঈনউদ্দিন সিদ্দিকী ৩৭ শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী আখতার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ঈদ ও পরীক্ষা- এই দুই দিক বিবেচনা করে বিচারকরা আসামিদের জামিন দিয়েছেন।

জামিন পাওয়া ৩৭ জনের মধ্যে ২২ জন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আফতাব নগরের ইষ্ট ওয়েষ্ট, বসুন্ধরা এলাকার নর্থ সাউথ, তেজগাও এলাকার সাউথ ইষ্ট ও মহাখালীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। জামিন পেয়েছেন ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয় ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আলাদা তিন মামলায় ৯ শিক্ষার্থীরও। ঢাকা মহানগর হাকিম সারাফুজ্জামান আনছারীর আদালতে ৫ হাজার টাকায় মুচলেকায় জামিন হয় নয়জনের। এরা হলেন-সোহাদ খান, মাসরিকুল ইসলাম, তমাল সামাদ, মাহমুদুর রহমান, ওমর সিয়াম, মাহাবুবুর রহমান, ইকবাল হোসেন, নাইমুর রহমান ও মিনহাজুল ইসলাম।

গত ৪ আগস্ট বিকেলে ঝিগাতলা ও ধানমন্ডিতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও অফিস ভাংচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। একই আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর শাহবাগ, উত্তরা (পশ্চিম), নিউমার্কেট ও কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা পৃথক মামলায় আরও সাত জনের জামিন হয়েছে।

বাড্ডা থানার মামলায় জামিন পাওয়া ১৪ ছাত্র হলেন- রিসালাতুল ফেরদৌস, রেদোয়ান আহমেদ, রাশেদুল ইসলাম, বায়েজিদ, মুশফিকুর রহমান, ইফতেখার আহম্মেদ, রেজা রিফাত আখলাক, এ এইচ এম খালিদ রেজা, তারিকুল ইসলাম, নূর মোহাম্মদ, সীমান্ত সরকার, ইকতিদার হোসেন, জাহিদুল হক ও হাসান।

অন্যদিকে ভাটারা থানার মামলায় জামিন পাওয়া আট ছাত্র হলেন- আজিজুল করিম, মাসাদ মরতুজা বিন আহাদ, ফয়েজ আহম্মেদ আদনান, সাবের আহম্মেদ, মেহেদী হাসান, শিহাব শাহরিয়ার, সাখাওয়াত হোসেন ও আমিনুল এহসান।

রোববার সকালে আদালতের কাছে শিক্ষার্থীদের পক্ষে আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। অ্যাডভোকেট কবীর হোসেন, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ূয়া, আক্তার হোসেন জুয়েল, মিজানুর রহমান, আদনান রোজীসহ কয়েকজন আইনজীবী এ আবেদন করেন।

শুনানিতে ছাত্রদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এসব ছাত্রের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। মামলার এজাহারেও অনেকের নাম নেই। সন্দেহজনকভাবে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাসচাপায় শহিদ রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। গত ৫ আগষ্ট শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে ঘরে ফিরে গেলেও বেসরকারি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের চেষ্টা করে। পরদিন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, সাউথ ইস্ট ও ব্র্যাকের শিক্ষার্থীরা।

(Visited 1 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here