ত্রাণের জন্য আমিরাতের বিপুল অর্থ সাহায্য নিচ্ছে না ভারত সরকার

0
875

Sharing is caring!

বিধ্বংসী বন্যায় বিপর্যস্ত দক্ষিণ ভারতের কেরালার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত যে ৭০০ কোটি রুপি আর্থিক সহায়তা করতে চেয়েছিল, ভারত সরকার তা ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

- Advertisement -

সরকারিভাবে সে কথা ঘোষণা করা না-হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলি বিবিসিকে জানিয়েছে, গত প্রায় দেড় দশক ধরে বিদেশি সাহায্য গ্রহণের ক্ষেত্রে ভারতের যে নীতি – তা অনুযায়ী এই সহায়তা নেওয়া সম্ভব নয়।

আমিরাতের জনসংখ্যার একটা বড় অংশই কেরালা থেকে যাওয়া লোকজন, আর ভারতের ওই ভূখন্ডের সাথে তাদের বিশেষ সম্পর্কের সুবাদেই তারা বিপুল অঙ্কের সাহায্য দিতে চেয়েছিল।

তা ছাড়া কেরালার পুনর্গঠনেও এখন প্রচুর অর্থের দরকার। তা সত্ত্বেও কেন ভারত ওই সহায়তা নিচ্ছে না, তা নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে বিস্তর।

কেরালার বন্যাকবলিতদের সাহায্যে ভারতীয় সেনা

প্রায় একশো বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় কেরালায় শুধু শত শত প্রাণহানিই হয়নি, লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘরবাড়ি ভেসে গেছে – প্রায় পুরো রাজ্যের অবকাঠামোও ভেঙে পড়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাই, আবুধাবি, শারজার মতো শহরগুলি গড়ে তোলার পেছনে এই কেরালার মানুষদের অবদান প্রচুর – আর তার স্বীকৃতিতেই আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মোহামেদ কেরালার বন্যাত্রাণে সাতশো কোটি রুপির সমপরিমাণ অর্থ দিতে চেয়েছিলেন।

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন নিজেই এ কথা জানান, কিন্তু আমিরাতের প্রস্তাব আসলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে দ্বিধায় ফেলে দেয়।

ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় কেরালার প্রতিনিধি, পর্যটনমন্ত্রী কে জে আলফানসো এ খবর জানার পর বিবিসিকে বলেন, “আমিরাত যেরকম দরাজভাবে সহায়তা করতে চেয়েছে তা অবশ্যই স্বাগত, তাদের ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু এই বিদেশি সাহায্য নেওয়া যাবে কি না, তা কেন্দ্রীয় সরকারই ঠিক করবে।”

ভারতের পর্যটনমন্ত্রী ও কেরালার রাজনীতিবিদ কে জে আলফানসো

ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও আমিরাত কর্তৃপক্ষকে টুইটারে ধন্যবাদ জানান, কিন্তু পাশাপাশি ভারত সরকার এই সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে যে, শুধু আমিরাত নয় – মালদ্বীপের মতো ছোট দেশগুলোও কেরালার জন্য যে সাহায্য করতে চেয়েছে তার সবই ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

এদিন দিল্লিতে থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতও টুইট করে জানান যে ভারত আসলে কেরালার জন্য কোনও বিদেশি সাহায্যই নিতে চাইছে না।

দিল্লিতে সিনিয়র ডিপ্লোম্যাটিক সংবাদদাতা দেবীরূপা মিত্র বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, বস্তুত ২০০৪-র সুনামির পর থেকেই ভারত এই নীতি নিয়ে চলছে।

মিস মিত্র জানাচ্ছেন, “সেই সুনামির পর ভারত যে ইন্দোনেশিয়াতে ত্রাণবাহী জাহাজ পাঠিয়েছিল, তখন থেকেই তারা ত্রাণ নেওয়ার বদলে ত্রাণদাতা দেশ হিসেবেই নিজেদের দেখতে চায়। তখনই স্থির হয়েছিল, দেশের কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভারত আর বিদেশি সাহায্য নেবে না, নিজের শক্তিতেই তার মোকাবেলা করবে।”

কেরালার বন্যাত্রাণে ভারতীয় বিমান বাহিনী

“তবে এটা শুধু দ্বিপাক্ষিক সাহায্যের জন্যই প্রযোজ্য – বিশ্ব ব্যাঙ্ক বা এডিবির মতো বহুপাক্ষিক ফোরামগুলির সহায়তা এর মধ্যে ধরা হচ্ছে না। আর আমি মনে করি ভারত নিজের ক্ষমতায় বিপর্যয় সামলাতে পারছে কি না, সেটার চেয়েও এখানে বড় ব্যাপার হল সারা দুনিয়াকে দেখানো যে ত্রাণ নেওয়ার দিনকে পেছনে ফেলে ভারত অনেক এগিয়ে এসেছে।”

“২০১৩তে উত্তরাখন্ডে ভয়াবহ বন্যার সময়েও রাশিয়া-সহ অনেক দেশের সহায়তা ভারত প্রত্যাখ্যান করেছিল, আর তখনই প্রথম ভারত তাদের এই নীতির কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে”, বলছিলেন দেবীরূপা মিত্র।

তবে কেরালার ক্ষেত্রে এখন যে ঘটনাটা ঘটছে – তা হল সেখানকার বামপন্থী সরকার মনে করছে তাদের রাজ্য দিল্লির কাছ থেকে যথেষ্ট সহায়তা পাচ্ছে না, কাজেই এক্ষেত্রে বিদেশি সহায়তা নিলে অসুবিধার কিছু নেই।

কেরালার অর্থমন্ত্রী টমাস আইস্যাক

কেরালার অর্থমন্ত্রী টমাস আইস্যাক সে কথা স্পষ্ট করে বলেওছেন। মি আইস্যাকের কথায়, “আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বিপর্যয় সামলাতে কেন্দ্রের কাছে ২০০০ কোটি রুপি চেয়েছিলাম, সেই জায়গায় তারা মাত্র ছশো কোটি রুপি দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।”

“তাহলে আমিরাতের এই সাহায্য কেন প্রত্যাখ্যান করা হবে সেটাই আমার মাথায় ঢুকছে না। এই ধরনের সহায়তার ওপর আমাদের কোনও করও বসানো নেই।”

এরই মধ্যে ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে প্রবল হাসি-মশকরা চলছে, কেরালার বন্যা পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে মোট ছশো কোটি রুপির সহায়তা ঘোষণা করেছিলেন, তার চেয়েও একশো কোটি রুপি বেশি দিতে চেয়েই না কি আমিরাত সরকার গন্ডগোল করে ফেলেছে!

বিজেপির মন্ত্রী কে জে আলফানসো যার জবাবে বলছেন, যাদের বন্যাত্রাণে এসে নামার মুরোদ নেই – অথচ সোশ্যাল মিডিয়াতে গুলতানি করার সময় আছে – তারাই কেবল এ ধরনের বাজে রসিকতা করতে পারেন।

(Visited 25 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here