বিডিজবসের বিজ্ঞাপন, আবেদন করে তিন শতাধিক চাকরিপ্রার্থী দিশেহারা

0
325

Sharing is caring!

চাকরি খোঁজার ওয়েবসাইট বিডিজবস এ কাতারের একটি হাসপাতালে নার্স ও টেকনোলজিস্টদের লোভনীয় চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। এই বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে অবগত নন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে বিজ্ঞপ্তিটি ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলেছে বিডিজবস। তার আগেই মাত্র আট দিনে তিন শতাধিক চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা।

- Advertisement -

প্রতারণামূলক ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আবেদনকারীদের যাচাই-বাছাই শেষে চারজন প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হবে। পরে তাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের খরচে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাদ মেডিকেল কর্পোরেশনে মাসিক সাড়ে সাত হাজার কাতারি রিয়াল (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার টাকা) বেতনে ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত নিয়োগ প্রদান করা হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, নিয়োগ প্রদানের পর চারজনকেই আগামী ২৫ অক্টোবর ডা. আলী আনসারীর কাছে উপস্থিত হতে হবে। প্রতিদিনের কাজের সময়সূচি হবে আট ঘণ্টা। পাশাপাশি প্রতি শুক্রবার ছুটি পাবেন নিয়োগপ্রাপ্তরা। এছাড়াও থাকা-খাওয়ারসহ নিয়োগপ্রাপ্তদের পরিবারের সদস্যদের দোহা নিতে চাইলে, সেই খরচও হামাদ মেডিকেল কর্পোরেশন বহন করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রতারণার শিকার একাধিক চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিডিজবস এর ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়। লোভনীয় এই বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের পর মাত্র ৮ দিনে অন্তত তিন শতাধিক চাকরিপ্রার্থী অনলাইনে আবেদন করেন। আবেদন করার একদিন বা দু’দিন পর প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করে চাকরিপ্রার্থীর ই-মেইলে হামাদ মেডিকেল কর্পোরেশনের ভুয়া প্যাডে “জব অফার” পাঠানো হয়। এই প্যাডটি বাংলাদেশের কাতার অ্যাম্বাসি কর্তৃক ভুয়া সত্যায়িত করা হয়। ই-মেইলে এই জব অফারের পাশাপাশি ২৯৫ ডলার সিকিউরিটি মানি জমা দেয়াসহ যোগাযোগ করার জন্য শাহনেওয়াজ রেজাসহ একাধিক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে ০১৭৫৭৩৭২৩০৬ এবং ০১৯১১৮৯৬১৫২ এই দুটি নম্বরসহ আরও একাধিক নম্বর দেয়া হয়।

Barguna-Jobs-1

তারা আরও বলেন, ই-মেইলে পাঠানো নম্বরে যোগাযোগ করা হলে, সিকিউরিটি মানি এবং যাদের পাসপোর্ট নেই তাদের পাসপোর্ট দ্রুত করিয়ে দেয়ার কথা বলে আবেদনকারীদের কাছ থেকে ২০-২৫ হাজার টাকা করে ০১৭৫৭৩৭২৩০৬, ০১৬১১৭৯৯১১৫, ০১৯১১৮৯৬১৫২ এই তিনটি রকেট একাউন্ট এবং ০১৮৬২৪৮৩৩৯৯ এই বিকাশ একাউন্টসহ আরও একাধিক একাউন্টে টাকা নিয়েছে প্রতারকচক্রটি।

প্রতারণার শিকার একজন চাকরিপ্রার্থী বলেন, এমন লোভনীয় চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখার সঙ্গে সঙ্গেই অনলাইনে আবেদন করি। আবেদন করার একদিন পরই আমাকে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করে ই-মেইল পাঠানো হয়। ই-মেইলে পাওয়া নম্বরে যোগাযোগ করলে, আমার দ্রুত পাসপোর্টসহ আরও কয়েকটি কাজ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ০১৭৫৭৩৭২৩০৬ এই রকেট নম্বরে ১৫ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। পরে ওই নম্বরে আমি টাকা পাঠানোর পর এখন তারা ঘুরাঘুরি করছে। আমাকে পাসপোর্ট অফিসেও নিচ্ছে না। বারবার ওয়াদা দিয়ে ঘুরাচ্ছে। সামনেও আসছে না। তাদের প্রকৃত ঠিকানাও বলছে না।

মাজেদুল ইসলাম নামের টাঙ্গাইলের আরেক চাকরিপ্রার্থী বলেন, বিডিজবসে এই লোভনীয় চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার পর জব অফার পেয়ে সিকিউরিপি মানি পাঠিয়েছি আমি। শুধু আমি নয়, এত কম টাকায় এরকম একটি লোভনীয় চাকরি পেতে টাকা পাঠিয়েছে অধিকাংশ চাকরি প্রত্যাশী।

প্রতারণার শিকার এক চাকরিপ্রার্থীর মামা মো. খলিলুর রহমান বলেন, আমার এক ভাগ্নে আবেদনের পর ই-মেইল পেয়ে এই চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৫ হাজার টাকা দেয়। বিষয়টি আমি জানতে পেরে ওই হাসপাতালের নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দেই। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এরকম কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি বলে আমাকে জানায়।

এ বিষয়ে বিডিজবসের সিইও প্রকাশ রয় চৌধুরী বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান বিডিজবসে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে চাইলে, আমাদের কর্মীরা সরেজমিনে সেই প্রতিষ্ঠানের অফিস পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেন। তাদের প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

তিনি বলেন, যে সকল ক্ষেত্রে সরেজমিনে পরিদর্শনের সুযোগ থাকে না সেই সকল বিজ্ঞপ্তিতে চাকরিপ্রার্থীদের সতর্কতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে আবেদন করার পাশাপাশি সকল ধরনের আর্থিক লেনদেন থেকে বিরত থাকতে বিজ্ঞাপনের নিচে বলা থাকে।

তিনি আরও বলেন, ১৮ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশিত হয়। যার আবেদনের শেষ সময় ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর। এই প্রতারণামূলক বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আমরা জানতে পেরে ২৫ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তিটি সরিয়ে নেই। এ ঘটনায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে চাকরিপ্রার্থীদের আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান।

Barguna-Jobs-1

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতারকচক্রটির ব্যবহৃত রকেট একাউন্টগুলোর মধ্যে ০১৭৫৭৩৭২৩০৬ এই একাউন্টটি সাহনেয়াজ রেজা নামের এক ব্যক্তির স্মার্টকার্ড দিয়ে খোলা হয়েছে। তার বাবার নাম শাহজাহান রেজা, মায়ের নাম আসকারা বেগম। তার বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাই এর মঘাদিয়া এলাকায়। তার বর্তমান ঠিকানা, বাসা-২/২, মগবাজার, ওয়ারলেস কলনী, শান্তি নগর, রমনা, ঢাকা।

আর ০১৬১১৭৯৯১১৫ এই রকেট একাউন্টটি খোলা হয়েছে মাহমুদা খাতুন নামে এক নারীর স্মার্টকার্ড ব্যবহার করে। তারা বাবার নাম মহিউদ্দীন, মায়ের নাম লায়লা আঞ্জুমান বানু। তার বাড়ি নাটোর সদরের বঙ্গজল এলাকায়। তার বর্তমান ঠিকানা, বাসা-৯, পশ্চিম ইব্রাহিমপুর, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা।

তবে এ বিষয়ে শাহনেওয়াজ রেজা মোবাইল ফোনে জানান, বিডি জবসে প্রকাশিত আমার বিজ্ঞপ্তিটি সঠিক। তবে আমি কোনো চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেইনি।

এ বিষয়ে অর্গানাইজড ক্রাইম (সিআইডি) এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শারমিন জাহান বলেন, এ ধরনের অপরাধ নিয়ে আমরা কাজ করে থাকি। ভুক্তভোগী প্রতারণার শিকার চাকরিপ্রার্থীরা যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করেন তাহলে আমরা এই প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করব।

(Visited 1 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here