রুপসজ্জার কারিগর মুক্তিযোদ্ধা এম এ হাদি।।

0
314
বরিশাল
বরিশাল

Sharing is caring!

রির্পোট: সিদ্দিকুর রহমান ॥

পোশাক সরবরাহ এবং রুপসজ্জার কারিগর মুক্তিযোদ্ধা এম এ হাদি বরিশালের যাএাঙ্গন ও মঞ্চনাটকে এক আদৃত নাম।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দূঢ়তার সাথে এই কাজটি টিকিয়ে রাখলেও, কালের বির্বতনে ও বর্তমান আধুনিকতার ছোয়ায় তা হারিয়ে যেতে বসেছে। যার ফলে এক সময়ের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস এই কাজটির ক্ষেএ কমে যাওয়ায়, এখন আর্থিক দৈন্যদশায় দিন কাটাচ্ছে দেশের সূর্যসন্তান এম এ হাদি।
পূববর্তী অর্থ বছরে(২০১৪-১৫) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে অসচ্ছল সংস্কৃতিসেবী হিসেবে মাসিক কল্যান ভাতা পেলেও, বর্তমানে কোন এক অজ্ঞাত কারনে তাও বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে জীবন যাপন করতে তার দিন আনতে পান্তা ফুরায় এর মত অবস্থা হয়েছে।
বর্তমানে তার একমাএ আর্থিক যোগানের মূল উৎস মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকার থেকে প্রাপ্ত ভাতা ও হাতে সাইনবোর্ড লেখা ও ছবি বাধানোর ছোট্ট একটি দোকান। এ থেকে যা আয় হয় তো দিয়ে কোন রকম দিনাতিপাত করে চলে যাচ্ছে তার জীবন।
কিন্তু বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা এবং সন্তানদের পড়ালেখার খরচ দিয়ে মাস শেষে ঋনের বোঝা মাথায় এসে পড়ে। যাএা ও নাটকে রুপসজ্জার কাজের জন্য সেসময়ে শুধু বরিশালেই নয় রুপসজ্জার কারিগর এম এ হাদি খ্যাতি সারা দেশেই  ছড়িয়ে পড়েছিল।
১৯৫০ সালের ২রা জানুয়ারি পটুয়াখালীর কালিকাপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করা মুক্তিযোদ্ধা এম এ হাদির মেট্রিকুলেশন পাশ করার পর এই পেশায় কাজ শুরু হয়েছিল। প্রথমত যাএাশিল্পীদের সাথে অভিনয় করার চেষ্টা করলেও পরবর্তীতে রুপসজ্জার কাজটি কে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। নিজ কর্মকান্ডের মাধ্যমে জনসাধারনের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সৃষ্টি করাই ছিল রুপসজ্জার কারিগর এম এ হাদির একমাএ শখ।
নগরীর নতুন বাজার সিটি মার্কেটের (২য় তলায়) হাদী আর্ট নামের দোকানে রুপসজ্জার কারিগর মুক্তিযোদ্ধা এম এ হাদির সাথে আলাপ কালে তিনি জানান, যাএা ও নাটকে অংশগ্রহনকারীদের রুপসজ্জা করাই ছিল তার নেশা ও পেশা।
চরিএের সাথে মিলিয়েই সবচেয়ে ভাল রুপসজ্জা উপহার দেয়াই ছিল তার প্রধান লক্ষ্য। সেই স্বাধীনতার যুদ্ধের পরবর্তী বরিশালের যাএা ও নাটক অঙ্গনে বড় থেকে ছোট প্রায় সব উজ্জল নক্ষএের রুপসজ্জার জন্য তাদের গালে  রুপসজ্জার কারিগর এম এ হাদির হাতের ছোঁয়া লাগেনি এমন শিল্পী ও নাট্যকর্মীর সংখ্যা খুবই কম।
এছাড়াও বরিশালের যাএা ও নাট্যঙ্গনের উজ্জল নক্ষএ মরহুম আনিস আহমেদ, আকবর হোসেন, মীর মুজতবা আলী, মিন্টু বসু, মুক্তিযোদ্ধা আক্কাস হোসেন, সৈয়দ দুলাল, হাবিবুর রহমান পলু, জোতিন্ময় প্রকাশ হিটলার , সুলতান আলম নয়া, এস এম জামান ভাই ছিল অন্যতম। যাদের অংশগ্রহনকৃত প্রায় নাটকের রূপসজ্জার জন্য ডাক পড়ত এই হাদির । যার ফলে এই কাজের বিপরীতে প্রসংশা কুড়িয়েছেন ব্যাপক হারে। প্রবীন থেকে নতুন প্রজন্মের অধিকাংশ তাকে চিনে বলে জানায় রুপসজ্জার কারিগর মুক্তিযোদ্ধা এম এ হাদি।
তিনি বলেন, রূপসজ্জার কাজের প্রশংসার মধ্যে অন্যতম কাজ হল খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটারের মঞ্চায়িত  বিক্ষুদ্ধ অতীত এবং নজরুল , বিসর্জন । কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কাছ থেকে পেয়েছেন সম্মাননা। এছাড়াও তার এই কাজের সাফ্যলের পিছনে যে মানুষগুলোর অবদান, তাদের নাম বলতেও দ্বিধাবোধ করেননি দেশের এই সূর্যসন্তান।
রুপসজ্জার কারিগর মুক্তিযোদ্ধা এম এ হাদি পূববর্তী বছর গুলোর স্মৃতিচারন করে বলেন, একটা সময় ছিল যাএা ও নাটক মঞ্চায়িতের জমজমাট অবস্থা। ঐসময়ে কাজের ব্যস্ততা এতটাই ছিল যে, তিন থেকে চার গ্রুপের রুপসজ্জার কাজ একসময়ে করে দিতে হতো। আবার কোন কোন সময়ে সময় সংক্ষেপনের জন্য কাউকে ফিরিয়ে দিতেও বাধ্য হতাম। ঐ সময়ে আর্থিক অবস্থার কোন দৈন্য দশা ছিল না। পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতেই জীবন যাপন করতেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে সপ্তাহ তো মাসেও একটা নাটকও ও মঞ্চায়িত হয় না। আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে সবার ঘরে ঘরে এখন টেলিভিশন আর ডিস এন্টেনার ক্যাবল। যার ফলে ঘরে বসেই তার বিশ্বকে দেখতে পাচ্ছেন। আর সেজন্যই মঞ্চায়িত নাটকের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে সাধারন মানুষের। আবার মানসম্মত নাটক মঞ্চায়িতের অভাব থাকার ফলে এর দর্শকের সংখ্যা বর্তমানে অনেকটা বিলুপ্তের পথে । বিদেশী অপসংস্কৃতির ফলে বর্তমানে বাংলার আদি সংস্কৃতিকে বিলুপ্ত করার ব্যাপক হারে পায়তারা করছে ।
রংতুলি শিল্পী হাদি বলেন, তার এই দৈন্যদশার মধ্যেও থেমে নেই রুপসজ্জা ও রংতুলির শিল্পকে টিকিয়ে রাখার কাজ। মনের মধ্যে গেঁথে থাকা এই কাজটির পাশাপাশি বেশ কয়েকেটি নাটকও লিখেছেন তিনি। যার মধ্যে রাজার সুরে রাজা ও স্বাধীনতার মানচিএ ইতিমধ্যে মঞ্চায়িত হয়েছে। এছাড়াও এই বছরের মধ্যে আরেকটি নাটক একাত্তরের মীর জাফর মঞ্চায়িত করার জন্য রির্হাসেলের কাজ চলমান রয়েছে। রুপসজ্জার কারিগর এম এ হাদি আরও জানান, বর্তমানে তিনি মঞ্চনাটক,যাএাপালা,হিন্দুধর্মীয় নাটক ও র‌্যালীর রুপসজ্জা সহ যাবতীয় পোশাক সরবরাহ করে থাকেন। যা দিয়ে কোন রকমের সংসার টিকিয়ে রাখছেন।
এসময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, একসময় এই হাদির চাহিদা ছিল বেশ। কিন্তু বর্তমানে মঞ্চনাটকের প্রচলন বিলুপ্ত হওয়ার রুপসজ্জার কারিগর মুক্তিযোদ্ধা এম এ হাদিও বিলুপ্ত হতে চলেছে। কেউ কোন খবর রাখেনা । তখনই খারাপ লাগে যখনই মনে পড়ে যখন দেখি মঞ্চ নাটক উঠে যাচ্ছে।  এছাড়াও দেশি নাট্যকার  কর্র্তৃক দেশীয় অফুরন্ত ক্ষেএ থাকা সত্বেও, বিদেশী নাট্যকারের নাটক বাংলায় রুপান্তর করে ঢাকঢোল পিটিয়ে মঞ্চায়ন করা হচ্ছে।
তিনি জানান, দক্ষিণাঞ্চলের যাএাশিল্পীদের নিয়ে তিনি গড়েছেন  দক্ষিণাঞ্চল শিল্পী পরিষদ (দশিপ) নামের সংগঠন। যার কার্যক্রম এখন চলমান রয়েছে। এছাড়াও জ্বারি শিল্পীদের নিয়ে ,দক্ষিণাঞ্চলের জারি শিল্পী সংগঠন খুললেও পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও তার আয়ের উৎস হাদি আর্ট দোকানে শুধু মাএ রংতুলির কাজ হয়। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল প্যানাফ্লেস্কের কাজ হওয়ার কারনে তারে রং তুলির কাজ অনেকটা কমে গেছে। এখন শুধুমাএ বাসা ভাড়া ও জমি বিক্রির সাইনবোর্ড এর তৈরির  কাজ ছ্ড়াা কিছুই পাওয়া যায় না। এছাড়াও ডিজিটাল প্রযুক্তি আসার আগে বঙ্গবন্ধু , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সহ অনেক হৈতষী ব্যাক্তিদের ছবি রং তুলির মাধ্যমে আর্ট করে, পরে বাধাই করে বিক্রি করা হত। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল প্যানাফ্লেস্কের এর ভিরে তাও মৃতুপ্রায়।
তার আশা আকংক্ষা সম্পর্কে তিনি বলেন, বয়স তো কম হয়নি, কতদিন আর বেচে থাকবো । তারপরেও সেই পুরনো মঞ্চনাটক যদি আবার মঞ্চায়িত হত। যাএাপালা দেখার জন্য শতশত মানুষ ভিড় করতো , সেটা যদি আবার দেখতে পারতাম তাহলে একটু শান্তি পেতাম।
এসময় তিনি, সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ও সচীব সহ স্থানীয় প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, কিছুদিন পূর্বে বন্ধ হয়ে যাওয়া অসচ্ছল সংস্কৃতিসেবী হিসেবের মাসিক ভাতাটা যেন আবার কার্যকর হয়। যাতে করে তার পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার পথ আরও  বেগবান হয়।

- Advertisement -
(Visited 11 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here