হকারি করেও জিপিএ-৫

0
378

Sharing is caring!

রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের বাদুড়িয়া গ্রামের মো. আহসান হাবিবের ছেলে মো. আশিক আলী। আর অন্য ১০ জন ছাত্রের মতো ঘুম ভাঙে না তার। প্রতিদিন ভোরে খেয়ে না খেয়ে বাড়ি থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে রাজশাহী সদরে এসে এজেন্টদের কাছ থেকে পত্রিকা নিয়ে আশিক বেরিয়ে পড়ে বিভিন্ন অফিস, বাসা-বাড়িতে পত্রিকা পৌঁছে দিতে। পত্রিকা বিক্রি করে যা আয় তা দিয়েই চলে সংসার। এ রকম প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের লেখাপড়া চালিয়ে গেছে আশিক।

- Advertisement -

আশিকের অদম্য ইচ্ছার কাছে সব প্রতিকূলতা হার মেনেছে। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে। সে স্থানীয় জামিরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল। ইংরেজিতে এ প্লাস পেলে গোল্ডেন পেত আশিক।

আশিকের বাবা আহসান হাবিব নিজেও সংবাদপত্রের হকার। তার সামান্য আয়ে ছয়জনের সংসার চলে। তিনি এ বছরের শুরুর দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি শয্যাশায়ী। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অসুস্থ হওয়ায় থেমে যায় পরিবারের অর্থনীতির চাকা। তাই বাধ্য হয়ে আশিককে বাবার পেশায় নামতে হয়।

আশিক বলে, ‘আমার এসএসসি পরীক্ষার কয়েক মাস আগে বাবা এক্সিডেন্ট করেন। তিনি কাজ করতে পারছিলেন না। পরিবারে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। মায়ের কাছে গরু বিক্রির কিছু টাকা ছিল তা দিয়ে কিছুদিন চলে। ওদিকে বাবা পত্রিকা না দিলে প্রতিদিনের গ্রাহকেরা পত্রিকা নেওয়া বন্ধ করে দেবে। তাই আমাকে পত্রিকা বিক্রির কাজে নামতে হয়। সারাদিন পত্রিকা বিক্রি করে রাতে পড়ালেখা করতাম। এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়েও পত্রিকা বিক্রি করেছি।’

সে আরো বলে, ‘বাবা আমাকে কাজ করতে বারণ করতেন। তবুও আমি পত্রিকা বিলি করতাম। মায়ের পাশাপাশি বাবার উৎসাহে আমার এই সফলতা। এখন ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হতে চাই।’

আশিকের বাবা আহসান হাবিব বলেন, ‘পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে তিন ছেলেসহ ছয় সদস্যের সংসারে পত্রিকা বিক্রি করে আমার যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালানোই মুশকিল। আমি এক্সিডেন্ট করায় বেশ কিছুদিন পত্রিকা বিক্রি করতে পারিনি। তাই ছেলেটাকে কাজ করতে হয়। তার পরও আশিক এমন রেজাল্ট করবে ভাবতে পারিনি।’

তিনি আরো বলেন, ছেলেটাকে এখন ভালো কোনো কলেজে ভর্তি করতে চাই। এ জন্য অনেক টাকা-পয়সা দরকার। আমি গরিব মানুষ। জানি না এত টাকা কোথায় পাব। লেখাপড়া না করাই জীবনে আমি অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। আমার তিন ছেলেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই।’

ছেলের এমন সাফল্যের পরও তিনি ভবিষ্যৎ ভেবে শঙ্কিত। আশিকের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা কামনা করেন।

 

(Visited 2 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here