বরিশাল পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক আলোচনায় বক্তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পদের মত রাজনীতিবিদরাই জলবায়ু পরিবর্তনের বড় চ্যালেঞ্জ

0
502

Sharing is caring!

রির্পোটঃ সোহানুর রহমান।

বরিশালে পরিবেশ বিষয়ক এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ওয়াটার পার্টনারশিপের প্রেসিডেন্ট ও আন্তর্জাতিক পানি বিশেষজ্ঞ ড. ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার আজহারুল হক বলেছেন, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে প্রকৃতি ও পরিবেশ ক্রমাগতভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। একদিকে জীবনের চাহিদা অন্যদিকে বিশ্বকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচানো- এ দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধনের বিষয়টি চ্যালেঞ্জের। কিন্তু ধরীত্রিকে টিকিয়ে রাখতে হলে এ দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করতেই হবে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যলেঞ্জ হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পদের মতো খারাপ রাজনীতিবিদরা। যোগ্য রাজনীতিবিদরাই অন্যায্যতা ও বৈষম্য দূর করে অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ^কে সবুজ ও নিরাপদ রাখতে পারে বলে মনে করেন তিনি। এক পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতামূলক আলোচনা সভা ও সংসদীয় বির্তক প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল সোমবার বিকেলে উন্নয়ন সংস্থা সোস্যাল ইকোনেমিক ডেভলপমেন্ট সোসাইটির আয়োজনে এবং গ্লোবাল ওয়াটার পার্টনারশিপ ও বাংলাদেশ ওয়াটার পার্টনারশিপের সহযোগিতায় নগরীর জাহান কমিনিউটি সেন্টারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশাল জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো: সাজিদুর রহমান সদ্দার, বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো: হাসিনুর রহমান, বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আরেফিন বাদল, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত কাউন্সিলর (১৬,১৭,১৮) ইসরাত আমান রূপা প্রমুখ। ইয়ূথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের প্রধান সমন্নয়ক সোহানুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উন্নয়ন সংগঠক কাজী জাহাঙ্গীর কবির। আলোচনায় বক্তরা বলেন, শিল্পায়নের সাফল্যে নগর জীবনে এসেছে বিলাসিতা। কিন্তু হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ-প্রতিবেশ। উন্নয়নের নামে উজার হচ্ছে বনভূমি। দখল দুষনে মেরে ফেলা হচ্ছে বহতা নদী। বাড়ছে পানির লবনাক্ততা। নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ওজন স্তর। বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। উষ্ণায়নে গলছে বরফ; বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা। এই অমানবিকতার মাশুল দিচ্ছে, শুধু মানুষ নয়, পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীও। এরিমধ্যে, বাংলাদেশ সহ তৃতীয় বিশ্বে দেশগুলো, আগাম বন্যা, অনাবৃষ্টি, খরা, লবনাক্ততা বৃদ্ধিসহ জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব জনিত বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে প্রকৃতিনির্ভর কৃষি ব্যবস্থা পরিণত হয়েছে প্রকৃতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া একটি ব্যবস্থায়। বাংলাদেশে এক সময় পাঁচ থেকে সাত হাজার প্রজাতির যেসব ধান প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে উৎপাদিত হতো, তা এখন অল্প কয়েকটি উচ্চফলনশীল ধানের জাতে এসে ঠেকেছে। আমন ধান ছিল আমাদের প্রধান ফসল। প্রাকৃতিক বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল ছিল ওই ধান। “ধান, নদী, খাল- এই তিনে বরিশাল প্রবাদ বাক্যের মত আজ শুধু প্রবাদই হয়ে আছে। বাংলার শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত বরিশাল ছিল ধানের জন্য বিখ্যাত। বরিশালের চাল দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হত। আগে ধান, নদী, খাল নিয়ে বরিশালের মানুষ গর্ববোধ করলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ুর পরিবর্তন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, সংসারের অভাব, ভূমিদস্যুতার কারেন আজ আর বরিশালবাসী গর্ব করে বলতে পারছেনা। দ্রুত নগরায়নের ফলে ধান চাষ করার জন্য পর্যাপ্ত জমি না থাকার কারনে বর্তমানে বরিশালকেই অন্য অঞ্চলের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এছাড়া আমাদের তরুণ সম্প্রদায়কে দেখা যায় সবসময় মাথা নিচু করে দুই আঙুল দিয়ে কী যেন করছে! এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়তো যোগাযোগ বৃদ্ধি হয়েছে; কিন্তু হারিয়ে গেছে মানুষের সঙ্গে মানুষের আত্মিক যোগাযোগ, মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির যোগাযোগ। এখন আসলে সময় এসেছে প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ বা যোগসূত্র বাড়ানোর। বাংলাদেশের প্রকৃতি এখনও সুন্দর। অভ্যন্তরে এখনও অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে। সেসব আনুষ্ঠানিক পর্যটনস্থল হওয়ারও দরকার নেই। প্রতিটি গ্রামের আশপাশেই চমৎকার জায়গা রয়েছে বেড়ানোর জন্য। আমরা সময় পেলেই সেখানে যেতে পারি। আর বিভিন্ন উপলক্ষে পর্যটন স্থলগুলোতে গিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করলে যেমন প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়বে, তেমনি দেশীয় শিল্পের বিকাশেও সহায়ক হবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত কাউন্সিলর (১৬,১৭,১৮) ইসরাত আমান রূপা বলেন, মানব সভ্যতার শুরু থেকে মানুষ নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে, প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে এর অপূরণীয় ক্ষতি করে ফেলেছে। মানুষ সব সময়ই চেয়েছে, প্রকৃতির উপর নিজের আধিপত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে। তবে বাস্তবিকভাবে, প্রকৃতির সংস্পর্ষে মানুষ গেলে এবং ভালোবাসলে, অনিন্দ্যসুন্দর এই পৃথিবী বসবাসের উপযোগী থাকবে।আমরা জেল খাল পরিষ্কার করি সবাই মিলে তারপরও আবার আমরা ময়লা ফেলে ভরে ফেলছি খালটি। ময়লা ফেলার জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে নিদিষ্ট জায়গা দিলেও আমরা যেখানে সেখানে ময়লা ফেলি। আসুন আমরা নিজেরা সচেতন হই। আমরা নিজেরা যদি সচেতন হই তাহলেই আমরা সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলতে পারবো।

- Advertisement -
(Visited 26 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here