ঈদুল ফিতরে করণীয় ও বর্জনীয়

0
374

Sharing is caring!

ইসলামে ঈদের প্রবর্তন হয়েছে দ্বিতীয় হিজরির মাঝামাঝি সময়ে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) যখন মদিনায় আসেন, তখন দেখেন যে সেখানকার লোকেরা বছরে দুই দিন (নাইরোজ ও মিহরজান) আনন্দ করে, খেলাধুলা করে।

- Advertisement -

তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের এ দুই দিনের পরিবর্তে আরো বেশি উত্তম ও কল্যাণকর দুটি দিন দিয়েছেন। ১. ঈদুল আজহা। ২. ঈদুল ফিতর। (আবু দাউদ : ১/১৬১)

‘ঈদ’ শব্দটি আরবি, যার অর্থ আনন্দ। ‘ফিতর’ শব্দটিও আরবি, যার অর্থ রোজা ভাঙা। ঈদুল ফিতরের অর্থ রোজা শেষ হওয়ার আনন্দ, আল্লাহর নেয়ামত লাভ করার আনন্দ। হিজরি সনের দশম মাস তথা শাওয়াল মাসের ১ তারিখ ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়।

ঈদের দিনের সুন্নত ও মুস্তাহাব : (১) মেসওয়াক করা সুন্নত। (২) গোসল করা সুন্নত। (৩) সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। (৪) কিছু খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত। বিজোড় সংখ্যায় যেকোনো মিষ্টিদ্রব্য খাওয়া উত্তম, খেজুর অতি উত্তম।   (৫) ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া উত্তম। এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া অন্য রাস্তা দিয়ে আসা মুস্তাহাব। (৬) ঈদগাহে যাওয়ার পথে নিচুস্বরে তাকবির (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) পড়া সুন্নত। (৭) সাধ্যমতো উত্তম পোশাক পরিধান করা মুস্তাহাব। (৮) নামাজের জন্য ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকায়ে ফিতর আদায় করা সুন্নত। (দাতা ও গ্রহীতার সুবিধার্থে রমজানেও প্রদান করা যায়) (৯) ঈদের দিন চেহারায় খুশির ভাব প্রকাশ করা ও কারো সঙ্গে দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলা মুস্তাহাব। ১০. আনন্দ-অভিবাদন বিনিময় করা মুস্তাহাব। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৫৬, ৫৫৭, ৫৫৮, হেদায়া : ২/৭১, বুখারি : ১/১৩০, ইবনে মাজাহ : ৯২)

ঈদের নামাজ দুই রাকাত আর তা ওয়াজিব। এতে আজান-ইকামত নেই। যাদের ওপর জুমার নামাজ ওয়াজিব, তাদের ওপর ঈদের নামাজও ওয়াজিব। ঈদের নামাজ ময়দানে পড়া উত্তম। তবে মক্কাবাসীর জন্য মসজিদে হারামে উত্তম। শহরের মসজিদগুলোতেও ঈদের নামাজ জায়েজ আছে। (বোখারি : ১/১৩১, ফাতাওয়া শামি : ১/৫৫৫, ১/৫৫৭, আল মুহাজ্জাব : ১/৩৮৮)।

ঈদের নামাজের সময় : সূর্য উদিত হয়ে এক বর্শা (অর্ধ হাত) পরিমাণ উঁচু হওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত বাকি থাকে। তবে ঈদুল ফিতরের নামাজ একটু দেরিতে পড়া সুন্নত; যেন নামাজের আগেই বেশি থেকে বেশি সদকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যায়। (ফাতহুল কাদির : ২/৭৩, আল মুগনি : ২/১১৭)

নামাজের নিয়ত : নিয়ত অর্থ মনের ইচ্ছা। কাজেই মুখে উচ্চারণ করার কোনো প্রয়োজন নেই। মনে মনে নির্দিষ্ট করতে হবে যে আমি এ ঈদের নামাজ কিবলামুখী হয়ে এ ইমাম সাহেবের পেছনে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে আদায় করছি।

ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির ওয়াজিব। প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমা ও ‘ছানা’র পর তিন তাকবির। দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর রুকুতে যাওয়ার আগে তিন তাকবির। এ তাকবিরগুলো বলার সময় ইমাম-মুকতাদি সবাইকে হাত উঠাতে হবে। তৃতীয় তাকবির ছাড়া প্রত্যেক তাকবিরের পর হাত ছেড়ে দিতে হবে। কেউ যদি এ তাকবিরগুলো না পায়, তাহলে সে রুকুতে থাকা অবস্থায় আদায় করে নেবে। কারো পূর্ণ এক রাকাত ছুটে গেলে সে দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর তাকবিরগুলো আদায় করে নেবে। কেরাতের আগে আদায় করারও সুযোগ রয়েছে। নামাজ শেষে খুত্বা প্রদান ইমামের জন্য সুন্নত; তা শ্রবণ করা নামাজির জন্য ওয়াজিব। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৫৯, ৫৬০)

কারো ঈদের নামাজ ছুটে গেলে শহরের অন্য কোনো জামাতে শরিক হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। পরিশেষে যদি নামাজ ছুটেই যায়, তাহলে এর কোনো কাজা নেই। তবে চার রাকাত এশরাকের নফল নামাজ আদায় করে নেবে এবং তাতে ঈদের নামাজের মতো অতিরিক্ত তাকবির বলবে না। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৬১)

মহিলাদের জন্য পেছনে ভিন্ন উত্তম ব্যবস্থা থাকলে শুধু বৃদ্ধ মহিলাদের জন্য ঈদের জামাতে শরিক হওয়ার অনুমতি রয়েছে। তবে যুবতী মহিলাদের জন্য কোনোভাবেই অনুমতি-অবকাশ নেই। (ফাতহুল কাদির : ২/৭২)

পরিচিত কারো সঙ্গে কিছুদিন বা অনেক দিন পর দেখা হলে উভয়ে ডান গলা মিলিয়ে মহব্বতের সঙ্গে একবার কোলাকুলি করা এবং ‘আল্লাহুম্মা যিদ্ মহাব্বাতি লিল্লাহি ওয়া রাসুলিহ্’ পড়া সুন্নত। তবে ঈদের দিন জরুরি মনে করে কোলাকুলি করা বিদআত। অন্যথায় জায়েজ। (তিরমিজি : ২/১০২, মাহমুদিয়া : ২৮/২১১, ইসলাহি খুতুবাত : ১/১৮৬-১৮৭)

ঈদ আল্লাহ পাকের নিয়ামত। নিয়ামতের চাহিদা হলো, এর শুকরিয়া আদায় করা। নিয়ামত পেয়ে নিয়ামতদাতার অবাধ্য হওয়া তাঁর সঙ্গে বেঈমানি করার শামিল। এক মাস আল্লাহর বিধান মেনে চলে পুরস্কার প্রদান দিবসে তাঁর অবাধ্যতা করার চেয়ে নিকৃষ্ট কাজ আর কী হতে পারে? কাজেই এ নিয়ামতের দিন তাঁর কোনো অবাধ্যতা যেন না হয়, সে দিকে লক্ষ রাখা সব মুসলমানের কর্তব্য।

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ান বাজার, ঢাকা

(Visited 8 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here