নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের নিবিড় পর্যবেক্ষণ চলছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আ্যাটর্নি জেনারেলকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে।
রোববার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নবনিযুক্ত সহকারী বিচারকদের ৩৬তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, “রায়ের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ হিসেবে রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত আ্যাটর্নি জেনারেলকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে।”
ওই রায়ের বিষয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নিতে গত বুধবার জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়।
কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটি পাস হওয়ার আগে এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “সংবিধান সংশোধনের কোনো এখতিয়ার আদালতের নাই। আইনের ব্যত্যয় হলে তারা শুধু আইনের ব্যাখ্যা দিতে পারেন।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা রায়ের ‘অসঙ্গতি’ তুলে ধরার পাশাপাশি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যের সমালোচনা করেন।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০১৪ সালে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে এনেছিল। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ষোড়শ সংশোধনীকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে সামরিক শাসনামলে চালু করা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ব্যবস্থা পুনঃস্থাপিত করার কথা বলা হয়েছে।
সাত বিচারপতির ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেওয়া ৭৯৯ পৃষ্ঠার এই রায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজের পর্যবেক্ষণের অংশে দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনাও করেন।
গত ১ অগাস্ট ওই রায় প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোচনা চলছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে ‘খাটো করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবি তুলেছেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা। অন্যদিকে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির নেতারা স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এ রায় ‘ঐতিহাসিক’।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বুধবার সংসদে বলেন, যে যুক্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করা হয়েছে, তা ‘গ্রহণযোগ্য নয়’।
“এই রায় আবেগতাড়িত ও বিদ্বেষপ্রসূত। সুতরাং আমরা আইনি প্রক্রিয়া চাই। আমরা এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি।”
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে রোববারের অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়েও কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর যে ‘বর্বরোচিত কাণ্ড’ চলছে তার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় বাংলাদেশ।
“আমরা মানবিক বিষয়টি আগে দেখি। তারপর আন্তর্জাতিক বিষয়টি দেখি।”
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান হত্যা, নির্যাতনকে তিনি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের সঙ্গে তুলনা করে একে ‘একাত্তরের’ পুনরাবৃত্তি বলেন।
আনিসুল হক বলেন, ‘মানবিকভাবে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। নির্যাতিত রোহিঙ্গারা যদি চায়, তাহলে তারা আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারে। এটা তাদের ব্যাপার।”