‘ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় শাজেনূরের গায়ে আগুন দেন বেলাল’

0
119

Sharing is caring!

অনলাইন ডেস্ক:: ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় বরগুনার পাথরঘাটায় শাজেনূর ও তার মেয়ের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে মৃত্যুর আগে জানিয়ে গেছেন শাজেনূর বেগম। মৃত্যুর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার সঙ্গে থাকা বোন তাজেনূর ও ভগ্নিপতি ইব্রাহিমকে এসব তথ্য জানায় শাজেনূর।

- Advertisement -

শাজেনূরের বোন তাজেনূর ও ইব্রাহীম বরিশালটাইমসকে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন। এছাড়া পাথরঘাটা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভিনও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত ২০ জুন সকালে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন শাজেনূর। আগুন লাগানোর পর ঘটনাস্থলেই নিহত হয় তার মেয়ে ছকিনা আক্তার কারিমা।

ভগ্নিপতি ইব্রাহিম জানান, ১২ জুন আনুমানিক রাত ১২ দিকে তার সাবেক স্বামী বেলাল হোসেন একটি নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে শাজেনূরকে ঘর থেকে বাইরে আসতে বলেন। শাজেনূর বের হতে অস্বীকৃতি জানালে বেলাল শেষবারের মতো তাকে বাড়ি থেকে বের হতে অনুরোধ জানান এবং সকালে পাশের বাড়ির জাহাঙ্গীর চাচার বাড়িতে এসে যা বলার বলবে বলে ফোন কেটে দেয়।

এর কিছুক্ষণ পর শাজেনূর বাড়ির বাইরে আগুনের ফুলকি দেখে দরজা খুলে বের হয়। তখনই পেছন থেকে দুই-তিনজন তাকে জাপটে ধরে মাটিতে ফেলে দেয় এবং মুখে কাপড় ঢুকিয়ে দেয়। এ সময় বেলাল তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়।

ইব্রাহিম আরও জানায়,ঘটনার সময় মোটরসাইকেল ড্রাইভার ফারুক মোল্লা ও রহমানকে চিনতে পারে শাজেনূর। এরপর সে বেলালকে লাথি মেরে উঠে দৌড়ানোর সময় পেছন থেকে গায়ে পেট্রল দিয়ে শাজেনূরকে আবারও ঝাপটে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় বেলাল। এ সময় শাজেনূর চিৎকার করে ঘরে থাকা বাবা-মাকে ডাক দেয়। তখন দুর্বত্তদের মধ্যে একজন তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

সে সময় বেলালকে ঝাপটে ধরে শাজেনূর চিৎকার শুরু করলে বাড়ির লোকেরা বিষয়টি দেখতে পান। এরপর বেলাল ও তার লোকজন শাজেনূরের বাবার ঘরে এবং শাজেনূরের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

একপর্যায়ে বেলালের সঙ্গে শাজেনূরের ধ্বস্তাধ্বস্তি হলে বেলালের গায়েও আগুন ধরে যায়।আশপাশের লোকজন আসলে বেলাল পালিয়ে যায় এবং শাজেনূরের শরীরে লাগা আগুন নিভিয়ে ফেলে তারা।

এদিকে, এ ঘটনার পর আজ শনিবার বাড়ির পাশের পুকুরে মাছ ধরার সময় একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে ওই মোবাইল থেকেই শাজেনূরকে ফোন করে বেলাল।

নিহত শাজেনূরের মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে, নাতি ও বসতঘর পুঁড়ে ছাই হয়ে গেছে। পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। এ ঘটনার পর পুলিশ একবার আমার বাড়িতে এসেছিল, এরপর আর কোনো খোঁজখবর নেয়নি। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে সংশয়ে আছি।’

এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাথরঘাটা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল আমিন সিকদার জানান, বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থানকালে শাজেনূর পুলিশের কাছে যে জবানবন্দি দিয়েছে তাতে ধর্ষণের চেষ্টার কোনো অভিযোগ করেননি। তখন ঘটনাস্থলে থাকা শুধু বেলালের নাম উল্লেখ করেছেন। মামলার তদন্তের জন্য পুলিশ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে পরিচয় গোপন রেখে তদন্ত করে। এই মামলার তদন্তে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য খলিলুর রহমান বলেন, ‘শাজেনূর-বেলাল দম্পতি নিয়ে ঝামেলার কথা আগে থেকেই জানতেন। আগুনের ঘটনা ঘটার পর থেকেই আমি সার্বক্ষণিক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। একদিকে তাদের স্বজনদের হারানোর শোক, অপরদিকে লক্ষাধিক নগদ টাকাসহ কয়েক মণ ধান-চাল পুঁড়ে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেছে।’

পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী বেলালকে ২৮ মে তালাক দেয় শাজেনূর। শাজেনুরের তৃতীয় স্বামী বেলাল। কারিমা শাজেনূরের প্রথম স্বামী হাসানের মেয়ে। এর আগে একাধিকবার এই দম্পতির ঝামেলা নিয়ে মীমাংসা করা হয়েছে। গত ১২ জুন গভীর রাতে মা ও সৎ মেয়ের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় সাবেক স্বামী বেলাল হোসেন। এ ঘটনায় মেয়ে সখিনা আক্তার কারিমা (১০) ঘটনাস্থলে নিহত হয় এবং সাবেক স্ত্রী শাজেনূর বেগম (৩০) আগুনে দগ্ধ হন।

ওইদিন সকালে সাবেক স্বামী বেলাল হোসেনও (৩৫) আমগাছের ডালে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।

(Visited 1 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here