৫ জেলেকে অপহরণ করে এখন মিথ্যা বলছে বিএসএফ

0
156

Sharing is caring!

রাজশাহীর খরচাকা সীমান্তের এক কিলোমিটার ভেতর থেকে পাঁচ জেলেকে অপহরণের বিষয়টি অস্বীকার করছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বিএসএফের দাবি, তারা তুলে নিয়ে যায়নি, ওই পাঁচজন সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। খরচাকা নয়, গোদাগাড়ীর প্রেমতলী বিওপি এলাকার ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে তাদের গ্রেফতারের দাবি করে বিএসএফ। বিএসএফের দাবি, ওই পাঁচজন গরু পাচারকারী।

- Advertisement -

বিজিবিকে পাঠানো বিএসএফের ‘প্রোটেস্ট নোট’ এ এই উদ্ভট দাবি করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলীকে তলব করে সীমান্তে হত্যা ও অপহরণের তীব্র প্রতিবাদ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপরই এই ‘প্রোটেস্ট নোট’ পাঠায় বিএসএফ।

তবে বিএসএফের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে বিজিবি। বিজিবি জানাচ্ছে, নিজেদের সীমানা পেরিয়ে এক কিলোমিটার ভেতরে অনুপ্রবেশ করে পদ্মায় মাছ শিকাররত ওই পাঁচ জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বিএসএফ। জেলেদের সরকারি নিবন্ধনও রয়েছে। তারা হলেন- রাজন হোসেন (২৫), নুরুজ্জামান দোয়েল (২৭), কাবিল হোসেন (২৫), শাহীন আলী (৩৫) ও শফিকুল ইসলাম (৩০)।

পবা উপজেলার গহমাবোনা গ্রামে তাদের বাড়ি। গত ৩১ জানুয়ারি পদ্মার গহমাবোনা এলাকায় মাছ শিকার করছিলেন তারা। ওই সময় জলযান নিয়ে অনুপ্রবেশকারী বিএসএফ সদস্যরা তাদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় ভারতের মুর্শিদাবাদ কারাগারে বন্দী রয়েছেন তারা।

বিজিবি জানাচ্ছে, পাঁচ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনতে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানায় বিজিবি। বিজিবির আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরদিন সকাল সাড়ে ১০টায় নির্মলচরের সীমান্ত পিলার ৫৩/২/এস-এর কাছে পতাকা বৈঠকে বসতে সম্মত হয় বিএসএফ। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি বিএসএফ। সীমান্তে বৈঠকের প্রস্তুতি নিয়ে গিয়ে ফিরে আসতে হয় বিজিবিকে।

 

এরপর বিজিবির তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলে ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় আবারও পতাকা বৈঠকে বসতে রাজি হয় বিএসএফ। পতাকা বৈঠকে বিএসএফ প্রতিনিধি হাজির হলেও ফিরিয়ে দেয়নি জেলেদের। তাদের অনুপ্রবেশকারী দাবি করে মামলা দায়েরের
পর আদালতে তোলে।

পরে বিএসএফের এমন কাণ্ডের কড়া প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। তোলা হয় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি। এরপর কেবল দুঃখ প্রকাশ করে দায় সাড়ে বিএসএফ। এই ঘটনা কেবল বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে সীমাবন্ধ নেই, পৌঁছে গেছে প্রতিবেশী দুই দেশের সরকারের উচ্চপর্যায়েও।

রাজশাহী-১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, বিএসএফের প্রোটেস্ট নোটের প্রেক্ষিতে আমরা নতুন করে সীমানা মেপে দেখেছি। তাতেও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশের সীমানার এক কিলোমিটার ভেতরে অনুপ্রবেশ করে পদ্মায় মাছ শিকাররত পাঁচ জেলেকে তুলে নিয়ে যায়।

স্থানীয়রা বলছেন, পদ্মার গহমাবোনা এলাকায় নদী ও চরে সীমান্ত পিলার বা কাঁটাতারের বেড়া নেই। এই সুযোগে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে বিএসএফ। স্থানীয় জেলেরা নদীতে মাছ শিকারে নামলেই তেড়ে আসে বিএসএফ। বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে এসে তারা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় লিপ্ত। ফলে জেলেরা ভয়ে প্রায় ছয়দিন ধরে পদ্মায় আর নামতে পারছে না। ওই পাঁচ জেলেকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে মানববন্ধনও হয়েছে এলাকায়।

বিএসএফের অপহরণের শিকার শফিকুল ইসলামের মা আরজেমা বেগম জানান, অন্য জেলেদের সঙ্গে তার ছেলে পদ্মায় মাছ শিকার করছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ভেতর থেকেই তাকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ। ধরে নিয়ে গিয়ে তাকে ব্যাপক মারধরও করেছে। এই ঘটনার বিচার চান আরজেমা বেগম।

অপহরণের শিকার আরেক জেলে শাহীন আলীর স্ত্রী বিথি খাতুনের কোলে আট মাসের শিশুসন্তান। বিথির ভাষ্য, বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেছিলেন শাহীন। মাছ বিক্রির আয় দিয়ে সংসার চলতো তার। এখন তার সংসার চালানো দায়।

 

একই দশা আরেক জেলে কাবিল হোসেনের পরিবারের। তার স্ত্রী সমিরা খাতুনের কোলে আড়াই বছরের শিশুসন্তান। তিনি জানান, সংসার চালাতে ঋণ নিয়েছেন তার স্বামী। মাছ বিক্রির টাকায় সেই ঋণ শোধ করছিলেন। এখন সংসার চলছে না। কীভাবে শোধ করবেন সেই ঋণ। দ্রুত তাদের মুক্তি চাইছেন স্বজনরা।

এদিকে সীমান্তে অনুপ্রবেশের পর বরাবরই মিথ্যাচার করে আসছে বিএসএফ। গত ১৭ অক্টোবর জেলার চারঘাট সীমান্তে আন্তর্জাতিক আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করেই বাংলাদেশের প্রায় ৬৫০ গজ অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে বিএসএফ। ওই সময় বিজিবির হাতে আটকা ভারতীয় জেলেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টাও করে।

বিজিবির সদস্যরা বাধা দিলে বিএসএফ সদস্যরা বিজিবিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। বিজিবি পাল্টা গুলি চালালে বিএসএফের হেড কনস্টেবল বিজয় ভান সিং নিহত এবং বিএসএফ সদস্য রাজবীর সিং আহত হন। ওই সময় পতাকা বৈঠকে ডেকে বিএসএফ সদস্যদের ওপর গুলি চালানোর দাবি করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। বিএসএফের এমন মিথ্যাচারের কড়া প্রতিবাদও জানায় বিজিবি। পরে নিজেদের দায় স্বীকারও করে নেয় বিএসএফ।

বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত সদরদফতরের উপমহাপরিদর্শক এসএস গুলেরিয়া কলকাতার বিএসএফ ক্যাম্প ঠাকুর ভিলায় ৫৫তম বিএসএফ রাইজিং দিবসের বক্তৃতায় বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেও এসওপি লঙ্ঘন হয়েছে। বিষয়টি তদন্তেরও আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসওপি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এসওপি লঙ্ঘনের অভিযোগে এরই মধ্যে মুর্শিদাবাদের কাকমারি চরের বিএসএফের উপ-পরিদর্শকসহ তিন সদস্যের বিরুদ্ধে আদালত তদন্ত শুরু করেছে’।

(Visited 1 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here