রির্পোটঃ সিদ্দিকুর রহমান ॥
সংস্কার ও রংয়ের আস্তরনের ফলে পুরনো রুপ ফিরে পেয়েছে কড়াপুর মিয়াবাড়ী মসজিদ। বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলে ব্রিটিশ আমলের সূচনালগ্নে নির্মিত এই মসজিদটি বরিশালের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। শহরের পশ্চিমদিকে বরিশাল- কড়াপুর সড়ক সংলগ্ন মিয়াবাড়িতে মুঘল আমলে নির্মিত বাংলাদেশের এই প্রাচীন মসজিদটি অবস্থিত। তাছাড়া বর্তমানে ভ্রমনপিপাসু মানুষ গুলো প্রাচীন মুঘল আমলে নির্মিত এই মসজিদ দেখতে প্রায়শই ছুটে আসছে। তবে মসজিদটি দেখতে যাওয়ার যে সড়কটি রয়েছে তার অবস্থা খুবই খারাপ। বরিশাল- কড়াপুর সড়কের বাইপাস এই সড়কটি এতই করুন দশা যে, প্রাচীন ঐতিহ্যে বহনকারী এই মসজিদটি দেখতে আসা দর্শনার্থীদের প্রায়শই বিড়ম্বনা এবং ছোটখাট দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমান সময়ে শহর কিংবা গ্রাম নয় উন্নয়নের ছোয়ার ফলে প্রায় প্রতিটি রাস্তাই কাপের্টিং করা হয়েছে বা হচ্ছে। কিন্তু কড়াপুর মিয়াবাড়ী মসজিদ দেখতে যাওয়ার একমাত্র সড়কটি এখনো ইটের সলিং দেয়া। তাছাড়া প্রতিদিন ঐ রাস্তা দিয়ে গ্রামের প্রায় কয়েক শতাধিক মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু প্রতিদিনই কোন না কোন দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে তাদেরকে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাসের পরও এই রাস্তাটি এখনো কাপের্টিং হচ্ছেনা বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাছাড়াও প্রাচীন এই মসজিদটি দেখতে আসা দর্শনাথীরা এখানে আসতে আশা হারিয়ে ফেলছে।

প্রাচীন এই মসজিদ দেখতে আসার এই রাস্তাটি অতিসত্ত্বর সংস্কার করা দরকার বলে দাবি জানিয়েছেন তারা। বরিশাল সদরের উত্তর কড়াপুর গ্রামে আঠারোশত (১৮০০) শতকে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয় বলে ধারণা করা হয়। সাম্প্রতিককালে কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদটি রঙ করা হয়েছে এবং বর্তমানে এটির মেরামত কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এছাড়াও আয়াতক্ষেত্রকার এই মসজিদটির উপরিভাগে তিনটি ছোট আকারের গম্বুজ রয়েছে যেগুলোর মধ্যে মাঝখানের গম্বুজটি অন্য দুটি গম্বুজের চেয়ে আকারে কিছুটা বড়। কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদের সামনের দেয়ালে চারটি মিনার এবং পেছনের দেয়ালে চারটি মিনার সমেত মোট আটটি মিনার রয়েছে। এছাড়া সামনের এবং পেছনের দেয়ালের মধ্যবর্তী স্থানে মোট ১২টি ছোট মিনারও রয়েছে। মসজিদের উপরিভাগ এবং সবগুলো মিনারে ব্যাপকভাবে কারুকাজ করা হয়েছে। কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদের পূর্বদিকে একটি বিশালাকারের পুকুর রয়েছে। উঁচু বেসম্যাণ্টের উপর এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদে প্রবেশ করার জন্য দোতলায় একটি প্রশস্ত সিঁড়িও রয়েছে। এছাড়াও নীচতলায় বেসম্যাণ্টের অভ্যন্তরে কয়েকটি কক্ষ রয়েছে বর্তমানে সেগুলো সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। মসজিদের নিকটে অবস্থিত মাদ্রাসার ছাত্রদের থাকার কাজে ব্যবহার করা হবে বলে জানাগেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদের মুসুল্লী মো. আর্শেদ আলী সিকদার (৭০) জানান, মুঘল আমলে নির্মিত মসজিদটি এই অঞ্চলের প্রাচীন মসজিদ গুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রাচীন কারুকাজ সজ্জিত মসজিদটি দেখতে দুরদুরান্ত থেকে প্রতিনিয়ত মানুষ জন ছুটে আসছে।কিন্তু যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সড়কটি সংস্কারের অভাবে দিন দিন যাতায়াতের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এসময় তিনি মসজিদটি দেখতে আসা সড়কটির পুনসংস্কারের দাবী জানান। এসময় তিনি কিছুটা অভিযোগের সুড়ে বলেন, মসজিদটি দেখতে আসা অনেক দর্শনাথীরাই এর আদব কায়দা মানে না। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার এই ঘরটির উপরে নারী পুুরুষ উঠে হারহামেশাই ছবি তোলে থাকে। কিন্তু তাদেরকে নানভাবে নিষেধ করা হলেও তারা তা মানতে চায় না।

এজন্য মসজিদ কর্তৃপক্ষ মসজিদটির সামনে ছোট একটা সাইনবোর্ড সেটে দিয়েছেন। তাতে লেখা মসজিদে মহিলা,পুরুষ ও জীবের ফটো তোলা সম্পূর্ন নিষেধ। এদিকে মসজিদটি সম্পর্কে জানা গেছে, এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হায়াত মাহমুদ ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কারণে প্রিন্স অফ ওয়েলস দ্বীপে নির্বাসিত হন এবং তাঁর বুর্জুগ উমেদপুরের জমিদারিও কেড়ে নেয়া হয়। দীর্ঘ ষোল বছর পর দেশে ফিরে তিনি দু’টি দীঘি এবং দোতলা এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তাছাড়ও মসজিদটির স্থাপত্যরীতিতে পুরান ঢাকায় অবস্থিত শায়েস্তা খান নির্মিত কারতলব খান মসজিদের অনুকরণ দৃশ্যমান।


















