স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশালের গৌরনদী থানার চৌকস অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ফিরোজ কবির এর নিজস্ব ফেসবুক পেজে শনিবার তার লেখা “আমার কিছু অব্যক্ত কথা-ভেবেছিলাম কিছু লিখব না বা অব্যক্ত কথা প্রকাশও করবো না” শিরোনামে একটি লেখা পোস্ট করার পর সর্বত্র ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।
মুহুর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পাঠকেরা লাইক ও কমেন্টে ধন্য করেছেন ওসি ফিরোজ কবিরকে।
পাঠকদের জন্য পুরো লেখাটি হুবহুব তুলে ধরা হলো।
“যখন দেখি প্রতিনিয়ত মাদকাসক্ত সন্তানদের পিতা-মাতারা আমার কাছে এসে তাদের মাদকসেবী সন্তান সম্পর্কে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন, তখন তাদের কষ্টগুলো আমার হৃদয়কে ছুয়েঁ যায়। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির পিতা-মাতা ও পরিবারই বোঝেন এর কি যন্ত্রনা। আমি ক্রমাগত এই ধরনের মানুষের মুখোমুখি।
এমনও দেখা গেছে একজন দিনমজুর সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম করার পরে তার পরিবারের সদস্যদের মুখে আহার যোগানের জন্য বাজার থেকে চাল কিনে নিয়ে বাড়িতে ফেরেন, তখন তারই মাদকাসক্ত সন্তান সেই চালটুকু ছিনিয়ে নিয়ে মাদক ক্রয়ের যোগান দিয়েছে। বিষয়টি আসলে খালি চোখে অনুভব করার মত নয়। এ জন্য দায়ী কে? আমরা না হয় নাই ব্যক্ত করলাম। কিন্তু এর থেকে ফিরে আসার পথতো আছে। সেই পথটার দূরত্ব দূর গ্রহের কোন নক্ষত্রের মত নয়। আপনি আমি তথা সমাজের সকলে যদি এক পা করে এগিয়ে আসি তাহলে মাদক নামক ভয়াল গ্রাসের হাত থেকে এই সমাজের প্রতিটি মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব।
আমি যখন এই জনপদের মাটিতে জীবনে প্রথমবারের মত পা রেখেছিলাম তখন আমার ভিতরে একটা ভাললাগা বোধ কাজ করেছিল। যখন জানতে পারলাম এই জনপদটি মাদক নামক বিষ বৃক্ষে আবক্ষে নিম্মজ্জিত, তখন নিজের বিবেক থেকেই একটি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আমি এই জনপদকে মাদকমুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ্। এরই প্রেক্ষিতে আমার এই মাদক বিরোধী অভিযান/যুদ্ধ। আমি এই জনপদের প্রতিটি মানুষকে কথা দিয়েছিলাম আপনাদের সাথে আছি, আমি আমার কথা রাখব ইনশাল্লাহ।
আমার এই মাদক বিরোধী কার্যক্রম যখন পরিপূর্ণভাবে চলমান তখন বিভিন্ন বাঁধা আমার সামনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। আমি সেই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করার চেষ্টা অব্যহত রেখেছি। মাদকের বিরুদ্ধে মূল অভিযান আমার এখনো শুরু হয় নাই। আগামীতে হবে।-ইনশাল্লাহ্
সম্প্রতি একটি ঘটনা আমার হৃদয়ে অনেক রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে যেখানে গোটা গৌরনদীবাসী তথা আপমর জনতা মাদক নামক ভয়াল গ্রাস হতে মুক্তি চায়। সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করেন। সে সমস্ত অভিভাবকগণ, কলম সৈনিক, সুশীল সমাজ, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দগণ আমাকে স্ব-উৎসহে উৎসহ যুগিয়েছেন ও সাধুবাদ জানিয়েছেন সর্বপরি পাশে থেকেছেন। এমতাবস্থায় দেখা যায় একটি মাদক ব্যবসায়ী পরিবার যে পরিবারের দুইজন সদস্য এবং উক্ত দুইজন সদস্যের বিরুদ্ধে গৌরনদী মডেল থানায় একডজন তথা ১২টি নিয়মিত মামলা যাহা মাদক, ডাকাতিসহ পুলিশ এ্যাসল্ট মামলা রয়েছে এবং সেই সমস্ত মামলার অভিযোগপত্র বর্তমানে বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন।
উক্ত মামলার পলাতক আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে ১৬টি গ্রেফতারী পরোয়ানা গৌরনদী মডেল থানায় মূলতবী আছে। পাঠক আপনাদের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম কোন ভাল পরিবারের সন্তানদের বিরুদ্ধে কি কখনো এগুলো মামলা বা গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকতে পারে ?
যখন সেই পরিবারের একজন সদস্যকে বিজ্ঞ আদালতের মাদক মামলায় দুটি গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামী হওয়ায় পুলিশ গ্রেফতার করলো তখন উক্ত আসামী মনির সরদার পালানোর চেষ্টা করেছিল। পুলিশকে উদ্দেশ্যে করে অশ্লীল ভাষায় কথাবার্তা বলেছিল। সে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য ধস্তাধস্তি করেছিল। তখন পালানোর চেষ্টাকালে মাটিতে পরে গিয়ে ডান হাতের কাধের জয়েন্টে কিছুটা আঘাত পেয়েছিল।
এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে মৃদু লাঠিচার্জ করে। উক্ত কাজে পুলিশের কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিলনা এবং আসামী মনির সরদারের হাতও কিন্তু ভেঙ্গে যায় নাই। আসামীর হাতে কোন প্লাষ্টার নাই। শুধুমাত্র একটি এলবো ব্যাগ ঝুলানো আছে যা আপনারা ছবিতে দেখেছেন। আসামীর হাতের এক্স-রে কপি বিজ্ঞ আদালতে জমা দেওয়া আছে।
এইরুপ একটি মাদক ব্যবসায়ী তথা জঘন্য সব অপরাধে অভিযুক্ত পরিবারের জন্য এতো মায়াকান্না হয়, মিথ্যা কাহিনী সাজানো হয় তাহলে সাধারন অসহায় জনগন এর পাশে দাঁড়াবে কে ? পাঠক আপনাদের মাঝেই এই প্রশ্ন রেখে গেলাম।
পেপার পত্রিকায় দেখলাম পুলিশ নাকি টাকার জন্য প্রবাসীকে পিটিয়েছে। পুলিশ যদি টাকার জন্যই কাজ করে থাকে তাহলে হিরা মাঝি, মানিক মাঝি, গিয়াস নলি সহ অসংখ্য ব্যবসায়ীরা গ্রেফতার হতো না। কারন তাদের গ্রেফতার না করনে পুলিশ অনেকটাই অবৈধ লাভবান হতো। তাহলে সেটা যখন হয় নাই প্রবাসীকে টাকার জন্য পুলিশ পিটিয়েছে এই ঘটনাটি কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা বিচার করার দায়িত্ব আমি আপনাদেরকেই দিয়ে গেলাম।
এএসআই (নিরস্ত্র) মহিউদ্দিন কখনোই উক্ত আসামী মনির সরদারের পরিবারের নিকট তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে নাই বা অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যক্তি স্বার্থে চরিতার্থ করার জন্য লাঠিচার্জ করেনাই। সম্পূর্ণ বিষয়টি ছিল পুলিশের নিয়মিত দ্বায়িত্বের অংশ। কারন আসামী কখনোই নিজের ইচ্ছায় পুলিশের কাছে ধরা দেয়নাই ও বিজ্ঞ আদালতে আত্মসম্পর্ণ করেনাই। আসামীকে কৌশলে ধরে নিয়ে আসতে হয়। এই আসামীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
সর্বপরি আমি কাউকে আঘাত করার জন্য আমার অব্যক্ত কথাগুলো ব্যক্ত করি নাই। আমি এই জনপদকে মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে মুক্ত করার জন্য যতো আইনগত ব্যবস্থা আছে তা প্রয়োগ করতে পিছ পা হবনা। পাঠক আপনারাই বলুন পুলিশ কি এগিয়ে যাবে না পিছিয়ে যাবে???
-মোঃ ফিরোজ কবির
অফিসার ইনচার্জ
গৌরনদী মডেল থানা, বরিশাল।

















