‘সরকারে থাকতে না পেরে’ জাপায় চাপা ক্ষোভ

0
294

Sharing is caring!

সরকারে না থাকার বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সিদ্ধান্তে দলের বেশির ভাগ সাংসদই অখুশি। বিরোধী দলে থাকার বিষয়ে তাঁদের কোনো মতামত না নেওয়ায় দলের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধও তাঁরা। তাঁদের অনেকেই ভাবছেন, সরকারে থেকে মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হলে আখেরে দলের জন্যই ভালো হতো।

- Advertisement -

তবে দলের দু-একজন এ-ও বলছেন, বিরোধী দলে থাকলে একটি দল হিসেবে জাতীয় পার্টির গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। সেটা ভবিষ্যতের জন্য ভালো। আগের সংসদে বিরোধী দলে থেকে আবার সরকারের মন্ত্রী হয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। জাতীয় পার্টির এ অংশ মনে করে, এমন দ্বিমুখী চরিত্রের জন্যই এবার তাদের আসন কমেছে।

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত ২৯৮টি আসনের ফলাফল অনুসারে, জোটগতভাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট পেয়েছে ২৮৮ আসন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র ৭টি আসন। আলাদাভাবে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি, জাতীয় পার্টি ২২টি আসন পায়।

২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩৪টি আসন পেয়েছিল। দলের কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার পাশাপাশি চেয়ারম্যান এরশাদ মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পালন করেন। কেন্দ্রীয় নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, মসিউর রহমান রাঙ্গা মন্ত্রিসভায় স্থান পান।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পরপরই গত বৃহস্পতিবার ঐক্যফ্রন্ট বাদে নির্বাচিত সাংসদেরা শপথ নেন। দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ছাড়া শপথ নেন জাতীয় পার্টির বাকি ২১ সদস্যও । ওই দিন নির্বাচিত সাংসদেরা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে সভা করেন। বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আমরা নতুন সরকারের সঙ্গে যোগ দিতে চাই।’

তবে গতকাল শুক্রবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সই করা এক বিবৃতিতে জানানো হয়, জাতীয় পার্টিই হতে যাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল। বিরোধীদলীয় নেতা হবেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলের কোনো সদস্য মন্ত্রী হবেন না। আজ শনিবার আবার দলটির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ করার সিদ্ধান্ত জানান এরশাদ।

সাংসদদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত এভাবে পাল্টে ফেলায় অখুশি জাতীয় পার্টির একাধিক সাংসদ। তাঁদের একজন কিশোরগঞ্জ-৩ থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সাংসদ এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পার্টির দুই কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের এবং সব সদস্য মিলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, আমরা সরকারে থাকব। কিন্তু পার্টির চেয়ারম্যান নিজেই একটা স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) লিখে পাঠিয়ে বললেন যে আমরা বিরোধী দলে থাকব। আর আমাদের কোনো সদস্য মন্ত্রী হবে না।’

মুজিবুল হক বলেন, ‘উনি (এরশাদ) কাউকে ডাকেন নাই। কারও সঙ্গে আলাপও করেন নাই, প্রয়োজনও মনে করেন নাই।’ তবে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে মনে করেন মুজিবুল হক। কিন্তু সবার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হতো বলে মনে করেন তিনি।

সরকারে না যাওয়ায় কণ্ঠে ক্ষোভ ঝরে পড়ে রংপুর বিভাগ থেকে নির্বাচিত এক জাপা সাংসদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের সুনাম আছে। এবারও কয়েকজন নির্দ্বিধায় মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হতেন। এসব দায়িত্বে থাকলে দলেরই সুবিধা হয়।’

শপথ নেওয়ার পর জাতীয় পার্টির সাংসদদের বৈঠকে ছিলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি জানান, ওই বৈঠকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদই প্রথম জানতে চান, তিনি বিরোধী দলে থাকতে চান। তাঁর সঙ্গে কে কে আছেন? ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘তখন প্রথমে আমি হাত তুলি। বাকি ১৯ জনই হাত তুলবে কি না, দ্বিধার মধ্যে ছিল। আমার মনে হয় সবারই আশা ছিল, তারা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কিছু একটা হবে। আসলে বেশির ভাগেরই ইচ্ছা সরকারে থাকার।’

ফিরোজ রশীদ বলেন, জাতীয় পার্টি যদি সরকারে থাকতে চায় তবে দলের সবাইকেই সরকারে নিতে হবে। কেউ মন্ত্রী হবে বাকিরা বিরোধী দলের সাংসদ হয়ে থাকবে, এমনটা হলে মানুষের মনে খারাপ ধারণা হয়। ফিরোজ রশীদ মনে করেন, এভাবে ‘দ্বৈত নীতি’ নেওয়ার ফলে দলের ক্ষতি হয়েছে। এবার তাই আসন কমেছে।

আজই বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ হিসেবে রংপুর-১ থেকে নির্বাচিত সাংসদ ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার নাম ঘোষণা করেছেন এরশাদ। বিরোধী দলে থাকার বিষয়টি টেলিফোনে এরশাদ তাঁকে জানিয়েছিলেন বলে জানান জাপা মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমাদের বেশির ভাগ সরকারে থাকার পক্ষে ছিলেন। তবে পার্টির চেয়ারম্যান কেন বিরোধী দলে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন, এটা উনি ভালো জানেন।’

দলের পরবর্তী সভায় এরশাদ বিরোধী দলে থাকার বিষয়টি বিশদভাবে তুলে ধরবেন বলে জানান রাঙ্গা।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা দ্রুত পাল্টে ফেলার বিষয়টি বেশ পুরোনো। এ নিয়ে দলের মধ্যে ক্ষোভও আছে। এভাবে বারবার সিদ্ধান্ত নিয়ে আবার পাল্টে ফেলার ফলে মানুষের কাছে হেয় হতে হয় বলে দলের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য মন্তব্য করেন। দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভালোভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে সেবার জাতীয় পার্টি ৬০–এর কাছাকাছি আসন পেত। সুযোগটা হাতছাড়া হয়েছে দলের চেয়ারম্যান হঠাৎ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে। এবার গতবারের চেয়েও আসন কম। তাই এখন সরকার থেকে দূরে থেকে নিজেদের ‘বিরোধী’ ভাব দেখানো কতটুকু কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দিহান ওই নেতা।

(Visited 1 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here