কলামিস্টঃ আর-এম।
এই পৃথিবীতে সর্বাধিক উচ্চারিত শব্দগুলোর একটি- ভালোবাসা, যা সরাসরি হূদয়ের গভীর থেকে বের হওয়া অনুভূতি। ভালোবাসা কে, কাকে, কখন জ্ঞাপন করছে তা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। তবে ইসলামি শরিয়তের দাবি- ভালোবাসার অধিকার একমাত্র আল্লাহর প্রতি নির্দিষ্ট। মানুষ সাধারণত সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে নিজ সত্ত্বাকে, নিজেকে, এরপর অন্যসব মানুষ বা বস্তুকে। কিন্তু কোরআন-হাদিস অনুমোদিত পন্থায় ভালোবাসার চর্চা সর্বাধিক ও সবসময় একমাত্র আল্লাহর পানে হতে হবে। এ ক্ষেত্রেমহান আল্লাহর সমকক্ষ কাউকে বা কোনো বস্তুকে সাব্যস্ত করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে- ‘আর কোনো লোক এমন রয়েছে যারা অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালোবাসা পোষণ করে যেমন আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা হয়ে থাকে।’ (সূরা বাকারাহ-১৩৫)।
বান্দার কাছে আল্লাহই যেন সবকিছুর চেয়ে প্রিয় হয় এমনকি নিজের অন্তর তথা নিজ সত্ত্বার চেয়েও। উপরিউক্ত আয়াতে মহব্বত বা ভালোবাসা বলতে ইবাদতের মহব্বতকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাত্ মানুষ তার প্রিয়তম আল্লাহর সঙ্গে এমনতর গভীর সম্পর্ক রাখবে এবং তাঁর সঙ্গে এমন মহব্বত হবে যে সে আনন্দচিত্তে তার সমস্ত হুকুমকে পালন করবে এবং তাঁর নিষিদ্ধ কাজ থেকে বেঁচে থাকবে। এ মহব্বতই দ্বীন ইসলামের স্তম্ভ বিশেষ এবং অন্তরের সঠিকতার ভিত্তি।
মহান আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেন- ‘বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং বাসস্থান থাকে তোমরা পছন্দ কর, আল্লাহ তার রাসুল ও তার রাহে জিহাদ করা থেকে বেশি প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত।’ (সূরা তাওবাহ: ২৪)। আয়াতটিতে আল্লাহতায়ালার প্রচ্ছন্ন ধমক প্রতিভাত হচ্ছে বান্দার প্রতি। এটা প্রমাণিত যে, আল্লাহর মহব্বতের ওপর অন্য কারো মহব্বতকে প্রাধান্য দেয়া কবিরা গুণাহ ও সম্পূর্ণনিষিদ্ধ। সুতরাং তাওহীদ তথা আল্লাহর একাত্মবাদকে পূর্ণতা দিতে হলে প্রত্যেক প্রিয়তমের চেয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) কে বেশি ভালোবাসা দিতে হবে। অত্র আয়াতটি নাজিল হয় মূলত ওদের ব্যাপারে যারা হিজরত ফরজ হওয়াকালে মক্কা হিজরত করেনি। মাতা-পিতা, ভাই-বোন, সন্তান-সন্তুতি, স্ত্রী পরিবার ও অর্থ সম্পদের মায়া হিজরতের ফরজ আদায়ে এদের বিরত রাখে। এরা মূলত পার্থিব কামনা বাসনার জন্য মহান আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। সুতরং আল্লাহকে সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে আর তা সম্বব তার ইবাদতকে বেশি ভালোবেসেই।