সোমবার , ১০ এপ্রিল ২০১৭ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. Featured
  2. অন্যান্য খেলার সংবাদ
  3. অন্যান্য ধর্ম
  4. অপরাদ
  5. অর্থনীতি
  6. অলটাইম নিউজ লেটার
  7. আইটি টেক
  8. আইন – আদালত
  9. আইন শৃংখলা বাহিনী
  10. আন্তর্জাতিক
  11. আবহাওয়া বার্তা
  12. ইসলাম
  13. উদ্যোগ এবং পরিবর্তন
  14. ওয়েবসাইট
  15. কবিতা

মহিলা ক্রীড়াঙ্গনকে জাগিয়ে তোলার নেপথ্য নায়ক যতীন কুমার দাস।।

প্রতিবেদক
alltimeBDnews24
এপ্রিল ১০, ২০১৭ ১:৪৪ পূর্বাহ্ণ
মহিলা ক্রীড়াঙ্গনকে জাগিয়ে তোলার নেপথ্য নায়ক যতীন কুমার দাস

রির্পোট: সিদ্দিকুর রহমান ॥

বরিশালের মহিলা ক্রীড়াঙ্গনকে জাগিয়ে তোলার পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি এবং মেয়েদের অবগুন্ঠন খুলে খেলার মাঠে নিয়ে আসার নেপথ্য কর্মী পুরুষ যতীন কুমার দাস। যতীন দা নামের আড়ালে যার পোশাকী নামটি হারিয়ে গেছে। খেলার মাঠে পদচারনা ছিল এমন কেউ নেই যে তারা যতীন দাসকে চিনে না। এই প্রতিবেদনটিও সেই প্রতিভাবান ক্রীড়াব্যাক্তিত্ব যতীন কুমার দাসকে নিয়ে। যার প্রেরনা ও একক উদ্যোগে মহিলা খেলোয়াড়রা সংগঠিত হয়েছে। ক্রীড়া ব্যাক্তিত্ব যতীন দাস জানান, ১৯৬২ সালে তিনিই প্রথম মেয়েদের খেলার মাঠে নিয়ে এসে যে সাহসিকতার পরিচয় দেন তা হয়তো অন্য কেউ পারতেন না। “ তখন মেয়েদের বাইরে নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা স্কুলে যাওয়া ছিল নিষিদ্ধ । তখন তিনি তাদের বোরখা পরিয়ে মাঠে নিয়ে প্রশিক্ষন দিয়েছেন। সেই পাকিস্তান আমলে প্রথম মেয়েদের ব্যাডমিন্টন খেলায় উৎসাহিত করেছেন তিনি। যতীনদা প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময়ে মহিলা খেলোয়াড় উন্নয়নে ব্যয় করেন। বিনিময়ে তিনি কিছুই পাননি। খেয়ে না খেয়ে তার দিন কাটতো খেলার মাঠে খেলোয়ার উন্নয়নে। দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে এই প্রশিক্ষকের দ্বায়িত্ব পালন করে আসছেন । তবুও তার এতটুকু ক্লান্তি নেই । কিশোর-যুবক- প্রবীন সকলের পরিচিত যতীন দাশ খেলাধুলা নিয়ে বেচেঁ আছেন। প্রবীন এই ক্রীড়া সংগঠক এখনো ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কাজ করে আনন্দ পান। অফুরন্ত তার প্রান শক্তি।

ছড়া, আইভি,কেয়া, শাহিনুর, নাজনীন, বিনোতা এরা একসময়ে তার প্রিয় ছাত্রী ছিলেন বলে জানায় যতীন দাস। তিনি এসময় বলেন , এরকম আরও অনেকে ছিল যাদের প্রশিক্ষন দিয়ে তিনি স্বাচ্ছন্দো বোধ করতেন। কিন্তু আজকাল মেয়েরা কথা শুনতে চায় না। হয়ত দেখা গেল তিনি সকালে না খেয়েই মাঠে বসে আছেন কিন্তু তারা আর আসলো না। অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে যতীন দা জানান, বর্তমানে বরিশালের ক্রীড়াঙ্গনের অবস্থা খুবই খারাপ। আমি মহিলা খেলোয়ার ও পৃষ্টপোষকদের কাছ থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি। এসময় বলেন, জীবিকার তাগিদে তিনি বেশ কয়েকবার চাকুরী নিয়েছেন কিন্তু খেলাধুলায় মন টানে বিধায় তা ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, আমি চাই স্বাধীন ভাবে কিছু করতে। আর চাকুরী করতে গেলে কোন স্বাধীনতা থাকে না। আমি অর্থ চাই না, চাই মানুষের ভালবাসা। যতীন দাস অভিযোগ করে বলেন একসময়ে তিনি বাকেরগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার (বর্তমানে বরিশাল জেলা ক্রীড়া সংস্থা ) এ্যাথেলেটিক্স কোচ হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

১৯৮৪ সালের ২০ অক্টোবর তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক এটিএম নুরুল ইসলাম খোকনের স্বাক্ষরিত নিয়োগ পত্রের মাধ্যমে তিনি দ্বায়িত্ব পালন শুরু করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ঐ সংস্থায় নতুন কমিটি এসে ২০০৮ সালে তাকে বাদ দিয়ে দেয়। তখন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করেছিলেন শফিকুল আলম গুলজার। কেন তাকে এ্যাথেলেটিক্স কোচ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে? সেই কারনটি আজও স্পষ্ট হয়নি তিনি। এসময় তিনি আরো জানান, ঐ সময়ে তিনি কোচ কাম সুপারভাইজারের দ্বায়িত্ব পালন করলেও শুধু মাত্র একটি পদের বেতন নিতেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাতে ছিলেন । তখন জেলা ক্রীড়া সংস্থার একটি মানুষও অর্থ দিয়ে সাহায্য দূরের কথা সামান্য দেখতে পর্যন্ত যায় নি। জানা গেছে, এক সময়ের এই জনপ্রিয় খেলোয়ার বর্তমানে ফুটবল, হ্যান্ডবল, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, এ্যাথলেটিক্স , কাবাডি ইত্যাদি খেলা প্রশিক্ষন দিয়ে থাকেন। পূর্বে তিনি এসব খেলায় অংশগ্রহন করে পেয়েছেন বহু পুরস্কারও । ১৯৫৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান এমেচার এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন আয়োজিত ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় তিনি ৮০০ এবং ১৬০০ মিটার দৌড়ে প্রথম স্থান দখল করেন। ভলিবল খেলোয়ার হিসেবে তিনি ১৯৫৬-৭৫ সাল পযর্ন্ত জেলা দলের পক্ষে বিভিন্ন পর্যায়ের ভলিবল প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন করেন। ১৯৬১ সালে জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় ৮০০ ও ১৬০০ মিটার দৌড়ে ১ম পুরস্কার লাভ করেণ। তিনি জাতীয় ফুটবল প্রতিযোগীতায় বরিশাল জেলা দলের খেলোয়ার হিসেবে ১৯৫৮-৬৬ সাল পযর্ন্ত অংশগ্রহন করেন। ১৯৭৬ সালে যুবসংঘ আয়োজিত ১০ মাইল মিনি ম্যারাথনে তিনি প্রথম হন। ১৯৮২ ও ১৯৮৪ সালে তিনি জাতীয় অলিম্পিক কমিটি আয়োজিত অলিম্পিক সলিডারিটি কোর্সে (এ্যাথলেটিক্স ) এ অংশ নেন। এছাড়াও ১৯৮৫ সালে জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগীতায় রার্নাস আপ হন।

দিল্লীতে অনুষ্ঠিত এশিয়াড ক্রীড়ায় একজন প্রবীন খেলোয়ার হিসেবে তিনি বাংলাদেশ দলের একজন পর্যবেক্ষক নির্বাচিত হন। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে অংশ নিতে পারেননি। একজন সংগঠক ও প্রশিক্ষক হিসেবে তার নিরলস প্রচেষ্টায় বরিশাল জেলার খেলাধূলার বিশেষ করে মহিলা খেলোয়ারদের প্রভূত উন্নতি হয়। বরিশালেন বাইরেও বিভিন্ন জেলায় তিনি প্রশিক্ষন দিয়েছেণ। তিনি জাতীয় শিশূ কিশোর ও যুব সংগঠন চাঁদের হাট ও মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। অন্যদিকে দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহন করেছেন তিনি। ৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। ভারতের টারকী ক্যাম্পে প্রশিক্ষন নিয়েছেন । সে সময় তার সাথে বর্তমান সময়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ মিন্টু বসু, মানবেন্দ্র বটব্যাল কাজ করতেন। যতীন দাস একসময় দৈণিক বিপ্লবী বাংলাদেশের ক্রীড়া প্রতিবেদক হিসেবেও কাজ করেছেন। উল্লেখ্য ১৯৩৯ সালের ২২ শে ডিসেম্বর বরিশালের আমবাগান বাড়িতে তার জন্ম। পড়াশুনা করেছেন নগরীর নুড়িয়া স্কুল, বিএম স্কুল এবং বিএম কলেজে। তিনটি স্কুলে পড়ার প্রসঙ্গে বলেন আমি ভাল খেলতাম বলে এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে নিয়ে যেত। এরপর আই এ পাশ করার পর পড়াশুনা বন্ধ করে দেই এবং খেলাধুলার সংগে জড়িয়ে পড়ি। খেলাধূলার প্রতি বিশেষ ঝোঁক থাকার ছোট বেলা থেকে জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পাই । আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন প্রথম জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলে পুরস্কার পাই। এসময় তিনি আরো বলেন, ছোট বেলা থেকে তার মা এবং বড় ভাবি আমাকে খুব উৎসাহ দিতেন । এছাড়াও তার এই সাফল্যের পিছনে এই দুটি মানুষের অবদান সবচেয়ে বেশি। বরিশাল ক্রীড়া অঙ্গনের যতীন কুমার দাস (যতীন দা) বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে একজন । তবুও তার জীবন যাপন অত্যন্ত সাধারন।

বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রাপ্ত ভাতা এবং সন্তানদের দেয়া অর্থেই তার জীবিকা নির্বাহ পরিচালিত হচ্ছে। যতীন দা এখনো স্বপ্ন দেখেন মাঠে নেমে। কিন্তু তার সে স্বপ্ন স্বপ্নের রঙ্গেই রাঙা হয়ে আছে। আমাদের প্রত্যাশা তার আজন্ম লালিত স্বপ্ন সফল হোক। সে পাক তার প্রতিভার যোগ্য সম্মান। আমাদের মাঝে যতীন দা প্রজন্মের আর্দশ হয়ে বেচেঁ থাকুক। এসকল যতীনের জন্য ক্রীড়ামন্ত্রনালয়ের কি কিছু করার নাই ? এ ধরনের কৃতি খেলোয়ার ও প্রশিক্ষক এবং সংগঠকদের কি সম্মাননা দিয়ে সম্মানিত করা যায় না? তানা হলে ভবিষৎ প্রজন্ম কাদের কে দেখে উৎসাহিত হবে। বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন তৃনূমূল পর্যায়ের সাবেক এ সকল খেলোয়াড়দের সম্মানিত করুন এবং খেলোয়ার সৃষ্টিতে প্রশিক্ষক ও সংগঠকদের উৎসাহিত করুন।

(Visited ১০ times, ১ visits today)

সর্বশেষ - জাতীয়