দোহার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের পর সৌদি আরব থেকে কাতারি কৃষকদের বহিষ্কার করায় সীমান্তে আটকা পড়ে পিপাসায় প্রাণ গেছে শত শত কাতারি উটের। গত ৫ জুন সম্পর্কচ্ছেদের পর সৌদি ত্যাগে বেঁধে দেয়া ১৪ দিনের আল্টিমেটামের মধ্যে সৌদি আরব থেকে শত শত উট কাতারে নিতে ব্যর্থ হন মালিকরা। ওই সময় কাতারও সীমান্ত বন্ধ করে রাখে। দু’দেশের সীমান্তে অনাহারে পড়ে থাকতে হয় উটগুলোকে। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দিনে মাত্র কয়েকশ উট কাতারে নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়ছিল। ফলে সীমান্তে আটকা শত শত উট মারা যায় তৃষ্ণায় ও অনাহারে।
অল্পসংখ্যক উটকে সীমান্ত পেরিয়ে কাতারে নেয়ার অনুমতি দেয়ায় অনেক উট দুই দেশের সীমান্তে মরুভূমিতে আটকা পড়ে ছিল। তাপমাত্রাও বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। উট মালিকরা বলছেন, উটগুলো সীমান্তে নিয়ে এসে রমজান মাস থেকে তারা অপেক্ষা করছিলেন। অন্যান্য প্রাণীও রাস্তার পাশে মরে পড়ে আছে। অনেক কৃষক তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পশু ফেলে রেখে চলে গেছেন।
আমাদের উটগুলো মারা গেল। আমরা জানি না এখন কোনদিকে যাব
উটের মালিক আল হাজারি জানান, বিষয়টা মেনে নেয়া খুবই কঠিন। আমাদের উটগুলো মারা গেল। আমরা জানি না এখন কোনদিকে যাব।
আবু সামরা থেকে আসা উটের মালিক হুসেইন আল-মাররি বলেন, আমি সৌদি আরব থেকে ফিরে এসেছি। নিজের চোখে রাস্তার পাশে কয়েকশ উট পড়ে থাকতে দেখেছি। মানুষজন শত শত উট, দুম্বা হারিয়ে ফেলেছে।
অবস্থা বেগতিক দেখে সীমান্তের কাতারি পার্শ্বে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আট হাজার উটের জন্য আশ্রয়, পানি ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। কাতারের সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, উটের সুরক্ষার জন্য পশু চিকিৎসক ও পশু বিশেষজ্ঞদের পাঠানো হবে। এছাড়া শিগগিরই আরও অাশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করা হবে বলে দ্য পেনিনসুলা কাতার সংবাদ প্রকাশ করেছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, কাতারের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ফলে ১২ হাজার থেকে ২৫ হাজার পশু ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কাতারের কৃষকরা প্রায়ই তাদের উট প্রায় চার হাজার চারশ মাইলের মধ্যে তাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আহারের জন্য নিয়ে যান।
কিন্তু চলতি বছরের ৫ জুন সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ নয়টি দেশ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। ইরান এবং জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সমর্থন ও অর্থায়নের অভিযোগে সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়। তবে কাতার সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
বর্তমানে কাতারে ১০ লাখেরও বেশি উট, দুম্বা ও ছাগল রয়েছে। আন্তর্জাতিক পশু দাতব্য সংস্থা স্পানা’র মুখপাত্র বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে আমরা বহুবার পড়েছি। এর আগে সোমালিয়া, মালি এবং বিভিন্নস্থানে একই ধরনের পরিস্থিতি দেখেছি; তবে এবারের পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহ।
তিনি আরও বলেন, দোহার পক্ষ থেকে খাবার, পানি এবং আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এছাড়া শেষের দিকে এসে হলেও চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এটা মনে রাখা দরকার যে, অনেক মানুষই প্রাণীগুলোর ওপর নির্ভর করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। এসব প্রাণী তাদের জীবন ধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের পশুর ক্ষতির কারণে নিজেদের এমনকি পরিবারের জন্য বিধ্বংসী ফলাফল বয়ে আনতে পারে। প্রাণীগুলো বাঁচাতে সকলের এগিয়ে আসা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সূত্র : দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট।