বিএসএমএমইউতে ‘নতুন ভিসি’ নিয়োগে আগেভাগেই গুঞ্জন

0
300

Sharing is caring!

দেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বর্তমান উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানের মেয়াদ শেষ হতে এখনো বাকি চার মাসের বেশি সময়। কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে নতুন ভিসি নিয়োগ নিয়ে নানা গুঞ্জন।

- Advertisement -

বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের ২৪ মার্চ। নতুন ভিসি কে হচ্ছেন- তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র-জুনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যে শুরু হয়েছে জোর গুঞ্জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসাইটের সিনিয়র চিকিৎসকদের নাম এখন হাওয়ায় ভাসছে।

পরবর্তী ভিসি হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা সবাই স্বনামধন্য ও বর্তমান সরকারের আমলে স্বাস্থ্যখাতে প্রভাবশালী চিকিৎসক ও চিকিৎসক নেতা হিসেবে সুপরিচিত। বিএসএমএমইউয়ের সার্বিক উন্নয়নে বর্তমান ভিসির সহযোগী হিসেবেও তাদের কেউ কেউ গুরত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, ইতোমধ্যে ভিসি পদপ্রত্যাশীরা সরাসরি ও সরকারের শীর্ষ নীতি-নির্ধারকদের কাছের মানুষদের মাধ্যমে ভিসি পদে নিয়োগ পেতে ধর্ণা দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে যোগাযোগ রক্ষা করছেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভিসি পদপ্রত্যাশী সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বিএসএমএমইউয়ের ভিসি পদে নিয়োগ তদবিরে হয় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই নিয়োগ দেবেন। তারা বলেন, আগামী বছর নির্বাচনের বছর। সুতরাং ভিসি পদে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তাকে দক্ষ প্রশাসকের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও দক্ষ হতে হবে।

পরবর্তী ভিসি হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ডিন ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, প্রোভিসি (প্রশাসন) ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, প্রোভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লাহ শিকদার ও মেডিসিন ফ্যাকাল্টির ডিন ও একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. এম আবদুল্লাহ এবং সার্জারি অনুষদের ডিন ও বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) সভাপতি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান চিকিৎসক সমাজে ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে সুপরিচিত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ ও চিকিৎসক-শিক্ষক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা)-সহ সার্বিক উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনিসহ অন্যান্য সহকর্মীদের যৌথ প্রয়াসে সাধারণ রোগীদের কাছে বিএসএমএমইউকে সুচিকিৎসার আস্থাভাজন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।

তিনি প্রচলিত অফিস ডিউটির বাধা-ধরা সময় না মেনে নির্দিষ্ট সময়ের পরও অফিস করছেন এবং প্রায় প্রতিদিনই হাসপাতাল ও ওয়ার্ড ঘুরে রোগীদের নানা সমস্যা শুনে সমাধানের চেষ্টা করেন। এসব কারণে তিনি ভিসি পদে পুনঃনিয়োগ পেলে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে কাজ করতে পারবেন বলে ঘনিষ্ঠজনদের ধারণা।

নতুন ভিসি হিসেবে শক্তিশালী আরেক প্রার্থী অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান। স্বাচিপের সভাপতি হিসেবে শুধু বিএসএমএমইউতে নন, সারাদেশের বিপুলসংখ্যক চিকিৎসকের পছন্দের নেতা তিনি। বিরোধীদলে থাকাকালে তার অবদানের কারণে অনেকে তাকে ভিসি হিসেবে দেখতে চান। তবে কেউ কেউ বলছেন, তাকে শেষ পর্যন্ত ভিসি পদ না দেয়া হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।

আরেক প্রার্থী অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। বর্তমানে প্রোভিসি (প্রশাসন) হিসেবে সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বিএমএমর সাবেক এ মহাসচিবের বাড়ি গোপালগঞ্জে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার ভালো যোগাযোগ রয়েছে বলে গুঞ্জন আছে। ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেলে তিনি অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বলে তার সমর্থক নেতাকর্মীরা জানান।

ভিসি পদে নিয়োগপ্রত্যাশীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লাহ শিকদার বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে তিনি ভিসি পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন।

আরেক পদপ্রত্যাশী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক এম আবদুল্লাহ শুধু সুচিকিৎসক হিসেবেই নন, দক্ষ শিক্ষক ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবেও বিপুলসংখ্যক চিকিৎসকের কাছে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাকে ব্যক্তিগতভাবে খুব পছন্দ করেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এ কারণে তিনিও ভিসি পদের দৌড়ে এগিয়ে আছেন।

এছাড়া সার্জারি অনুষদের ডিন ও বিসিপিএসের শিক্ষক অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার সরকারের শীর্ষপর্যায়ে ভালো যোগাযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার মতো যোগ্যতা ও দক্ষতা রয়েছে বলে মনে করেন তার অনুসারীরা।

ওই ছয়জনের বাইরে আরো দু-একজন, যেমন সাবেক প্রো-ভিসি ও বর্তমানে বিএমডিসির সভাপতি শহীদুল্ল্যা মিয়া ও প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এএসএম জাকারিয়ার নামও আলোচনায় রয়েছে। তবে ভিসি পদপ্রত্যাশীরা সবাই যোগ্য হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপরই নির্ভর করে বলে স্বীকার করেছেন সবাই।

(Visited 8 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here