শূন্য হাতে ফিরে গেলেন শ্রাবন্তী

0
344

Sharing is caring!

‘আমার সংসারটা বাঁচান। আমি সংসার ভাঙতে দেব না।’ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরে বলেছিলেন ছোট ও বড় পর্দার একসময়ের জনপ্রিয় তারকা ইপসিতা শবনম শ্রাবন্তী। গত ৭ মে তাঁকে তালাকের নোটিশ পাঠান তাঁর স্বামী মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। পাশাপাশি এনটিভির মহাব্যবস্থাপক (অনুষ্ঠান) ছিলেন। কাজ করেছেন চ্যানেল নাইনেও। শ্রাবন্তী দীর্ঘদিন যাবৎ যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। সেখানে থাকতেই স্বামীর পাঠানো তালাকের নোটিশের খবর পান। এরপর গত ২৫ জুন দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরেন। তাঁদের বড় মেয়ে রাবিয়াহ আলমের বয়স সাত আর ছোট মেয়ে আরিশা আলমের সাড়ে তিন বছর।

- Advertisement -

১২৪ দিন বাংলাদেশে অবস্থান করার পর গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে নিউইয়র্কে ফিরে যান শ্রাবন্তী। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিল দুই মেয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার আগে তিনি কোনো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শ্রাবন্তীকে বিদায় জানাতে যান ছোট পর্দার পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী। আজ শনিবার সকালে তিনি জানান, শ্রাবন্তীকে মোহাম্মদ খোরশেদ আলম যে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছিলেন, ঢাকার পারিবারিক আদালতের বিচারক দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ইশরাত জাহান তার স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। যদি শ্রাবন্তীর সঙ্গে আর সংসার করতে না চান, তাহলে তাঁর স্বামীকে আবার নতুন করে আইন অনুযায়ী যথাযথভাবে তালাকের নোটিশ পাঠাতে হবে। আর নিউইয়র্কে ফিরে যাওয়ার আগে মোহাম্মদ খোরশেদ আলম তাঁর স্ত্রী কিংবা দুই মেয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি।

গতকাল বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে যাওয়ার আগে চয়নিকা চৌধুরীকে নিজের ব্যাপারে শ্রাবন্তী বলেছেন, ‘আমার সব ভালোবাসা আলমের জন্য। আমি অপেক্ষা করব। এখন আমাকে লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। আমাকে দুই মেয়ের কথা ভাবতে হবে।’

মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ডের ব্যাপারে চয়নিকা চৌধুরীকে শ্রাবন্তী বলেছেন, ‘এই গ্রিন কার্ডকে অকার্যকর করার জন্য আমি কোনো ব্যবস্থা নেব না। আলম আমার সন্তানদের বাবা। যদি কোনো দিন তাঁর ভুল ভাঙে, ও আবার সন্তানদের কাছে ফিরে আসে। সেই দিনটির জন্য আমি অপেক্ষা করব।’

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম ও শ্রাবন্তীর বিয়ের কাবিননামায় দেনমোহর বাবদ ১০ লাখ টাকার কথা উল্লেখ আছে। দেনমোহরের টাকা পাওয়ার ব্যাপারে শ্রাবন্তী কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন? চয়নিকা চৌধুরী জানান, এ বিষয় নিয়ে শ্রাবন্তীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। শ্রাবন্তী বলেছেন, ‘স্বামীকেই যদি না পাই, এসব দিয়ে কী করব?’

এদিকে দেশে ফিরে গত ২৬ জুন রাজধানীর খিলগাঁও থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আর যৌতুকের মামলা করেন শ্রাবন্তী। এরপর তিনি বারবার স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত গত ৩১ জুলাই সকালে ঢাকার পারিবারিক আদালতে তাঁরা মুখোমুখি হন। এর আগে গত ২২ জুলাই স্বামী মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের পাঠানো তালাকের নোটিশকে অবৈধ দাবি করে ঢাকার পারিবারিক আদালতে ‘দাম্পত্য স্বত্ব পুনরুদ্ধার’ মামলা করেন শ্রাবন্তী। ৩১ জুলাই সকালে আদালতে শুনানির পর দুপুরে দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ইশরাত জাহান মীমাংসার জন্য শ্রাবন্তী ও মোহাম্মদ খোরশেদ আলম আর তাঁদের দুই মেয়ে রাবিয়াহ আলম ও আরিশা আলমকে নিয়ে নিজ কামরায় বসেন। বিচারক এই স্বামী-স্ত্রীর কাছ থেকে তাঁদের অভিযোগ শোনেন, তাঁদের সন্তানদের কথা শোনেন, এই দম্পতির সঙ্গে আলোচনা করেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।

তখন বিচারকের সামনে রাবিয়াহ আলম বলেছে, ‘আমরা ব্রোকেন ফ্যামিলি চাই না। আমরা বাবা-মা, দুজনের সঙ্গে থাকতে চাই। তোমরা কি আমাদের জন্য কিছু করতে পারো?’ সাত বছরের রাবিয়াহ আলমের এ কথায় সেখানে উপস্থিত অনেকের চোখ ভিজে যায়। কিন্তু মোহাম্মদ খোরশেদ আলম নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অনড় থেকেছেন।

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন এবং সেখানে দীর্ঘ সময় থেকেছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, যেহেতু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ১০ বছর চাকরি হয়েছে, তাই তিনি এক বছরের ছুটি পান। সেই ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। কিন্তু অন্য সময় যাওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেননি। জানালেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড পেয়েছেন।

২০১০ সালের ২৯ অক্টোবর মোহাম্মদ খোরশেদ আলম আর শ্রাবন্তীর বিয়ে হয়। এবার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমি অনেক ছাড় দিয়ে শ্রাবন্তীকে বিয়ে করেছিলাম। শ্রাবন্তীর যেসব ব্যাপারে ছাড় দিয়েছি, তা থেকে শ্রাবন্তী এতটুকু সরে আসেনি। এত দিন আমি ব্যাপারগুলো সামনে আনতে চাইনি, কারণ তা আমাদের কারও জন্যই ভালো হবে না। দিনে দিনে আমাদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব অনেক বেড়ে গেছে। পারস্পরিক সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস নেই বললেই চলে। যতটুকু অবশিষ্ট আছে, তা শেষ হওয়ার আগেই আমি সরে এসেছি। আমি চাইনি আমাদের সম্পর্কের ক্ষতিকর প্রভাব বাচ্চাদের ওপর পড়ুক।’

(Visited 1 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here