লেবুখালীতে পায়রা সেতুর অর্ধেক কাজ সম্পন্ন

0
287

Sharing is caring!

পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালীতে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি সেতুর আদলে নির্মিত চার লেন বিশিষ্ট পায়রা সেতুর কাজ প্রায় ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে যান চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এই সেতুর কাজ শেষ হলে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে দক্ষিণাঞ্চলের। এছাড়াও পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে দ্রুত পণ্য খালাস করে পৌঁছে দেওয়া যাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

- Advertisement -

পায়রা সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, এ সেতুটির দৈর্ঘ্য ১৪৭০ মিটার ও প্রস্থ ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সেতুর দুই দিকে এপ্রোচ সড়কের দৈর্ঘ্য হবে ১ হাজার ২৬৮ মিটার এবং প্রস্থ ২২ দশমিক ৮০ মিটার। এছাড়া পটুয়াখালী প্রান্তে ১৬টি ও বরিশাল প্রান্তে ১২টি পিয়ার হবে ৩০ মিটার করে। এছাড়া নদীর মাঝখানে ২০০ মিটার করে ৫টি পিয়ার থাকছে। মাঝে লেন ছাড়াও থাকছে ১ মিটার দৈর্ঘ্যের ফুটপথ। কর্ণফুলী সেতুর আদলে মূল সেতুতে স্প্যান বা পিয়ার থাকছে ৪টি। মাঝ নদীতে দু’টি ২শ’ মিটার ও বাকি দুটি ১১৫ মিটার করে। প্রতি স্প্যানের দূরত্ব হবে ৬৩০ মিটার। নদী থেকে সেতুর উচ্চতা হবে ১৮ দশমিক ৩ মিটার।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাস্তবায়নে পায়রা সেতুর প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে চীনের লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কোম্পানি লিমিটেড। সেতুটির কনস্যালটেন্ট হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশর ইনজিনিয়ারিং অ্যান্ড প্লানিং কনসালটেন্টস লিমিটেড, কুয়েতের ড. নাবিল আবদুল রহিম কনসালটেন্টস লিমিটেড, ইন্ডিয়ার ইন্টারকন্টিনেন্টাল কনসালটেন্টস লিমিটেড ও কোরিয়ার কুনওয়া ইনিজিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসাল্টিং কোম্পানি লিমিটেডের ৪টি প্রতিষ্ঠান।

এলাকাবাসীরা জানান, মাঝে মাঝে লেবুখালী ফেরিতে যানবাহনের লম্বা লাইন থাকে। ওই সময় ফেরি পার হতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টাও লেগে যায়। তাই সবাই অপেক্ষায় আছে কবে পায়রা ব্রিজের কাজ শেষ হবে। এ সেতুটির কাজ শেষ হলে পটুয়াখালী থেকে ঢাকা যেতে ১ থেকে দেড় ঘণ্টা সময় বাঁচবে। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ফেরিমুক্ত যোগাযোগ সম্ভব হবে। তখন জনসাধারণের দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা লাঘব হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের পায়রা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ শরীফ সজিব জানান, ‘মূল সেতুর প্লাটফর্ম থেকে ২২ দশমিক ৫ মিটার লম্বা পাইল তৈরি করা হবে। এ পাইলের সঙ্গে একটা একস্ট্রা ডোজ ক্যাবল সংযুক্ত করে ২শ’ মিটার স্প্যান তৈরি করা হবে। নদী রক্ষায় ১৪৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য কাজ করা হবে। এখানে জিও ব্যাগ ও তিন ধরনের সিসি ব্লক ব্যাবহার করে নদী শাষণ করা হবে। সেতুটিতে মোট গার্ডার থাকবে ১২৪টি। বরিশাল প্রান্তে গার্ডারের কাজ শেষ হলেও পটুয়াখালী প্রান্তে গার্ডারের কাজ চলছে। আগামী ৩ মাসের মধ্যে গার্ডারের কাজ শেষ করা যাবে।’

পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মহিউদ্দিন আহম্মেদ জানান, ‘লেবুখালীর পায়রা সেতু নির্মিত হলে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যে একটি যুগ শুরু হবে। এখানে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প কারখানা। সাগরকন্যা কুয়াকাটাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে।’ তিনি আরও জানান, ‘কুয়াকাটাগামী পর্যটক আর পায়রা বন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চলের পণ্যবাহী যানবাহন দ্রুত পৌঁছাতে পারবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। যেহেতু এখানে পায়রা বন্দর, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সোনরা চর ও কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে তাই এখানে ব্যবসায়ীরা সারা দেশ থেকে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগের পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নূর-ই-আলম জানান, ‘বরিশাল ও পটুয়াখালী প্রান্তের সব কয়টি পাইল ও পিয়ারের কাজ শেষ হয়েছে। ১টি স্ল্যাবের কাজ শেষ হয়েছে। মূল ব্রিজের ৫টি পিয়ারের মধ্যে ৩টির পাইল, পিয়ার ক্যাব ও পিয়ার হেডের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৮ নম্বর পিয়ারের কাজ চলছে এবং ১৭ নম্বর পিয়ারের কাজ আগামী মাসে শুরু করতে পারবো। এভাবে কাজ চলতে থাকলে ২০২০ সালের জুন সাসে সেতুটির কাজ করা যাবে বলে আশা করি।’

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালী জেলার প্রবেশদ্বার দুমকি উপজেলার লেবুখালীর পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার পর সেতুটির কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই।

(Visited 1 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here