এক যুগ পেরিয়ে প্রাণের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ঃ স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হোক ববি

0
67

Sharing is caring!

প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন
অনিন্দ্যসুন্দর কীর্তনখোলা নদীর তীর ঘেঁষে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে স্থাপিত হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের স্বপ্নের বিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাচ্যের ভেনিসখ্যাত বরিশাল নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে চলা কীর্তনখোলা নদীর অপরূপ স্নিগ্ধতার রেশ না কাটতেই দেখা মেলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয়ের নান্দনিক সৌন্দর্য মুহূর্তেই মায়ার বাঁধনে বেধেঁ ফেলে। ঋতুভেদে প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নবরূপে সজ্জিত হয় ক্যাম্পাস। শরতে শুভ্র কাশফুলে ছেয়ে যায়, বসন্তে পলাশ ফুলে রঙিন হয়ে ওঠে, শীতে কুয়াশার চাদর মুড়ি দেয় পুরো ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের আড্ডা-গানে মুখরিত হয়ে ওঠে মুক্তমঞ্চ, সবুজ প্রাঙ্গণ ও করিডোর।

- Advertisement -

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে তুলনামূলক নবীন হলেও শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে প্রতিষ্ঠার এক যুগ পূর্তি উদযাপন করছে দখিনের বাতিঘর খ্যাত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা, গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মাধ্যমে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বমহিমায় ভাস্বর। একঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষক, মেধাবী শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় এগিয়ে চলেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে তৎকালীন বেলস্ পার্কে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু উদ্যান) অনুষ্ঠিত জনসভায় তার ভাষণে ঢাকার বাইরে বরিশালে একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণাকে বাস্তবে পরিণত করার লক্ষ্যে ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল সদর উপজেলার কর্ণকাঠিতে ৫০ একর জমিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মাধ্যমে বরিশালবাসীর দীর্ঘদিনের যৌক্তিক প্রত্যাশা, দাবি ও লালিত স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন শুরু হয়।

পরের বছর ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল ক্যাম্পাসের কলেজ ভবনে অস্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম পরিচালনা এবং শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের শুভ সূচনা ঘটে। প্রতিষ্ঠাকালীন চারটি অনুষদের অধীনে ছয়টি বিভাগের ৪০০ শিক্ষার্থী নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় তার যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২৫টি বিভাগে প্রায় ৯ হাজার ১০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। ১৯৯ জন শিক্ষক, ১১৬ জন কর্মকর্তা এবং ১৪৪ জন কর্মচারীর সমন্বয়ে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়টি দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরির কারিগর হিসেবে জ্ঞানের আলো বিলিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের প্রতিটি সদস্যের আন্তরিকতা এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক, গবেষণা, সহশিক্ষাসহ বঙ্গবন্ধুর দর্শন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি খুব ভালোভাবেই করে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা ও গবেষণার বিস্তার, মুক্তচিন্তার বিকাশ এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রযুক্তিনির্ভর একটি কার্যকর গবেষণাধর্মী স্মার্ট উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। তরুণ প্রজন্মের কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তাচেতনা ও দর্শনকে ছড়িয়ে দিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সময়ে নানা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী :অর্জন ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক স্মারক সংকলন প্রকাশ, একাডেমিক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদ থেকে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে জার্নাল প্রকাশ, শিক্ষার্থীদের লেখায় ‘তারুণ্যের বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামের স্মরণিকা প্রকাশ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক ওয়েবিনার, বঙ্গবন্ধু অলিম্পিয়াড, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক দেওয়ালিকা প্রদর্শন, ‘পদ্মা সেতু এবং এর আর্থসামাজিক প্রভাব’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, কুইজ প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বৃক্ষরোপণ, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এসব অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ এবং শিক্ষার্থীদের উত্সাহ প্রদান আয়োজনকে করে তোলে গুরুত্ববহ। এছাড়া অভ্যন্তরীণ নীতিমালা সংস্কার, সেশনজট দূরীকরণ, পরীক্ষার ফলাফল, লাইব্রেরি ও অর্থ দপ্তরের অটোমেশনসহ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত পদোন্নতির ব্যবস্থা নিয়েছি। দ্বিতীয় পর্যায়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নেরও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

সাফল্যের এক যুগ পূর্তির এই আনন্দক্ষণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গসহ সবাইকে জানাই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উষ্ণ শুভেচ্ছা। বরাবরের মতো এ বছরও বিশ্ববিদ্যালয়টি তার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী জমকালোভাবে উদযাপন করতে যাচ্ছে। যুগপূর্তির এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দক্ষিণ বাংলার প্রাণপুরুষ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের পুরোধা পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী) আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্ এমপি। যাহোক, সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে প্রাণের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রযুক্তিনির্ভর মেধাবী ও দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হোক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়—প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি। জয়তু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

লেখক : উপাচার্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

(Visited 1 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here