বেশির ভাগ ফল বিপর্যয় কারন পরীক্ষকের ভুল।।

0
508

Sharing is caring!

পরীক্ষার ফলই শিক্ষার্থীর এগিয়ে যাওয়ার সোপান। এই ফল দিয়ে ছাত্রছাত্রীর মেধা ও কর্মের মান যাচাই হয়। ওপরের শ্রেণিতে ভর্তি, চাকরি, পদোন্নতি—এক কথায় পেশাগত জীবনের চালিকাশক্তি এই ফল। কিন্তু পরীক্ষার খাতা যাঁরা দেখছেন তাঁদের কারো কারো ভুলে ঘটছে ফল বিপর্যয়।

- Advertisement -

গতকাল কালের কণ্ঠ’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল পুনঃপর্যালোচনার আবেদনের হার বাড়ছে। খাতা দেখায় ভুল ছিল, পুনর্নিরীক্ষায় ধরাও পড়ছে। তার পরও ফল বিপর্যয়ের জন্য দায়ী সেই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, আর তাই সতর্ক হচ্ছেন না অন্য পরীক্ষকরাও। এই প্রবণতা সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থাকে ভালো বার্তা দেয় না।

পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন বৃদ্ধি ও পরীক্ষকদের ভুল নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটকে (বেডু) দায়িত্ব দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারাও প্রমাণ পায়, খাতা মূল্যায়ন ত্রুটিপূর্ণ। তারপর আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী এসএসসি পরীক্ষা থেকে আবশ্যিকভাবে খাতা দেখায় নামিদামি শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কিন্তু আন্তশিক্ষা বোর্ড যোগ্য পরীক্ষকদের তালিকার যে ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার তৈরি করছে তাতেও গলদ রয়েছে বলে কালের কণ্ঠ’র প্রতিবেদনে বলা হয়। নীতিমালায় বলা আছে, প্রধান পরীক্ষক হতে গেলে কমপক্ষে ১২ বছর ও পরীক্ষক হওয়ার জন্য পাঁচ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা লাগবে। নীতিমালা সেভাবে মানা হচ্ছে না। দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ডাটাবেইসে ঢুকে পড়ছেন অযোগ্য শিক্ষকরা। তাহলে ডাটাবেইস করে লাভটা কী হবে?

দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক ধরনের বিশৃঙ্খলা চলছে। জিপিএ ৫ বা এ গ্রেড নিয়েই আমাদের যত আগ্রহ! শিক্ষার মান পড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ বোধ করি না। সৃজনশীল ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, অথচ শিক্ষকদেরই অনেকে সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্ন করা শেখেননি। দুই মাসের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফল দেওয়ার উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। এই সময়ের মধ্যেও নির্ভুল খাতা দেখা সম্ভব, যদি কর্তৃপক্ষ সতর্ক থাকে। কিন্তু শিক্ষক খাতা দেখার পেছনে প্রয়োজনীয় সময় না দিয়ে কোচিং ও প্রাইভেট নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কেউ কেউ ছাত্রছাত্রীদের দিয়েও খাতা দেখান। প্রধান পরীক্ষকদের খাতা ফের দেখে দেওয়ার কথা থাকলেও তারা দায়িত্বটি পালনে উদাসীন। বোর্ড বা মন্ত্রণালয় এই উদাসীনতা দেখেও দেখে না। দায়ী খাতা নিরীক্ষকের শাস্তি হওয়া দূরের কথা, বোর্ড কর্তৃপক্ষকে আমরা শাস্তি প্রত্যাহারে মন্ত্রণালয় বরাবর সুপারিশ করতে দেখি। প্রশ্রয়ের এই সংস্কৃতি থাকলে ফল নৈরাজ্য তো হবেই!

শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় যাঁরা আছেন, মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের যাঁরা এই শিক্ষকদের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে রয়েছেন, সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করুন। নিজ জবাবদিহির মধ্যে থাকুন। শিক্ষার্থী ভালো পরীক্ষা দিয়েও শিক্ষকের ভুলে ফেল করবে, এ অমানবিক, অন্যায়। পরীক্ষাব্যবস্থার যেসব ত্রুটির কারণে লাখ লাখ শিক্ষার্থী মাসুল দিচ্ছে সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে। একজন পরীক্ষার্থীকেও তার প্রাপ্য ফল থেকে বঞ্চিত করার অধিকার আমাদের নেই।

(Visited 12 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here