সৌদির সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঈদুল ফিতর উদযাপন

0
388

Sharing is caring!

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে রবিবার (২৫ জুন) দেশের বিভিন্ন জেলায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। সৌদি আরবে শনিবার (২৪ জুন) পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় বাংলাদেশেও রবিবার কয়েকটি জেলায় ঈদ উদযাপন করছেন কয়েক হাজার মুসলিম।

- Advertisement -

সৌদির সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখায় একদিন আগেই তারা ঈদও উদযাপন করছেন।

কয়েকটি জেলার এসব গ্রামের বিভিন্ন পীরের অনুসারীরা বরাবরই রোজা, ঈদ, শবেক্বদর, শবেবরাত, শবেমেরাজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে পালন করে আসছেন।

বাংলাদেশে সাধারণত সৌদি আরবের একদিন পর চাঁদ দেখা যায় বলে রোজা, ঈদ, শবেক্বদর, শবেবরাত, শবেমেরাজসহ এসব ধর্মীয় অনুষ্ঠান একদিন পরে হয়।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

মুন্সীগঞ্জ

মুন্সীগঞ্জ সদরের ৯টি ও সিরাজদিখান উপজেলার ৬টি গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রবিবার ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। এদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আধারা গ্রামের জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় ও সিরাজদিখানের মালখানগর কলেজ সংলগ্ন গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির আঙ্গিনায় ৩ উপজেলার অর্ধশত মুসল্লি সকাল ১০ টায় ঈদের নামাজ আদায় করেন। ১৬ বছর ধরে এই ধারা অব্যাহত রাখছে এ সকল গ্রামের মানুষ।

মালখানগরে ঈদের নামাজ আদায় করতে আসেন সিরাজদিখান উপজেলার তালতলা, মালখানগর, কাজীরবাগ, বয়রাগাদি পাউলদিয়া গ্রাম ও টঙ্গিবাড়ি উপজেলার পুর্ব রায়পুরা গ্রামের বেশ কয়েকজন মুসল্লি। এ সময় নামাজের ইমামতি করেন নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার মীরগঞ্জ গ্রামের আলহাজ্ব মোহাম্মদ সুলতান মোড়ল।

ঈদ উদযাপিত সদর উপজেলার শিলই গ্রামের আফজাল হোসেন জানান, বেশ কয়েকটি গ্রাম আমাদের সাথে একত্রিত হয়ে ঈদ উদযাপন করছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরেই এই গ্রামগুলো সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করে আসছি। নামাজ শেষে কোলাকুলির মাধ্যমে কুশল বিনিময় করে ও একে অপরকে ঈদের দাওয়াত দিয়ে থাকি।

সদর উপজেলার ঈদ উদযাপিত গ্রামগুলো হচ্ছে- আধারা, কালিরচর, মিঝিকান্দি, বাংলাবাজার, আনন্দপুর, বাঘাইকান্দি, নয়াকান্দি, শিলই ও কংশপুরা।

লক্ষ্মীপুর

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলার ১১টি গ্রামে (আজ) রবিবার সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও বাজারের তালিমুল কোরান নুরানী মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা নেছার আহমদ।

এছাড়া জেলার উপজেলার নোয়াগাঁও, জয়পুরা, বিঘা, বারো ঘরিয়া, হোটাটিয়া, শারশোই, কাঞ্চনপুর ও রায়পুর উপজেলার কলাকোপা গ্রামসহ ১১টি গ্রামের প্রায় সহস্রাধীক মুসল্লী আগাম ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন।

আগাম ঈদ উদযাপন কারীরা জানান, মাওলানা ইসহাক (রা.) অনুসারী হিসেবে ৩৫ বছর ধরে মক্কা ও মদিনার সাথে সঙ্গতি রেখে ঈদসহ সব ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন তারা।

১৯৩২ সালে সাদ্রা দরবার শরীফের পীর মরহুম মাওলানা ইসহাক (রা.) এ মতবাদের প্রচলন শুরু করেন বলে জানা যায়।

টাঙ্গাইল

সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের শশীনাড়া গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবারের লোকজন ঈদ পালন করেছেন। গত ৫ বছর যাবৎ এ পরিবারগুলি সৌদি আরবে সাথে মিল রেখে ঈদ পালন করে আসছেন। প্রথম দিকে ১০টি পরিবার সৌদির সাথে মিল রেখে ঈদ পালন করা শুরু করে। এক পর্যায়ে এসব পরিবারদের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে পরে আরো ৪০টি পরিবার তাদের সাথে যোগ দেয়।এ সকল পরিবারগুলি সৌদির সাথে মিল রেখে গত এক মাস রোজা রেখেছেন।

ভোলা

ভোলার ১৪ গ্রামের ১০ হাজার শুরেশ্বরী পীরের অনুসারীরা প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদ উর্যাপন করেছে। জেলার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বোরহানউদ্দিন উপজোর মুলাইপত্তন গ্রামের চৌকিদার বাড়ির জামে মসজিদে। নামাজ শেষে তারা পরসপরকে আলিঙ্গল করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় তারা দেশ ও জাতীর কল্যান কামনা করে বিশেষ দোয়া মোনাজাত করেন। এ উপলক্ষ্যে মুলাইপত্তন গ্রামে বিশেষ মেলাও বসেছে। মেলায় সর্বস্তরের মানুষ অংশ গ্রহন করেন।

দিনাজপুর

সৌদি আরবের সাথে সঙ্গতি রেখে দিনাজপুরের সদর, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, কাহারোল এবং বিরল, বিরামপুর উপজেলার কিছু এলাকায় রবিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে প্রায় ২ হাজার পরিবার। এসব পরিবারের মুসল্লীরা বিভিন্ন স্থানে ঈদের নামাজ আদায় করেছে। সকাল সাড়ে ৮টায় দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়াপট্টিতে একটি কমিনিটি সেন্টারে (পার্টি সেন্টার) অনুষ্ঠিত ঈদের জামায়াতে প্রায় নারী-পরুষসহ প্রায় দুই শত মুসল্লী অংশ নেয়। এখানে ঈমামতি করেন মাওলানা মামুনুর রশিদ। এছাড়াও জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার সাইতাড়া, কাহারোল উপজেলার জয়নন্দ ও গড়েয়া, বিরল উপজেলার বালান্দোর, বিরামপুর উপজেলা বিনাইল ইউনিয়নের আয়ড়া দাখিল মাদ্রাসা মাঠে এবং জোতবানি ইউনিয়নের খয়ের বাড়ি দাখিল মাদ্রাসা মাঠে এবং পার্বতীপুর উপজেলায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

শেরপুর

শেরপুরের বিভিন্ন গ্রামে সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশের সঙ্গে মিল রেখে আগাম পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। শেরপুর সদর উপজেলার উত্তর চরখারচর ও দক্ষিণ চরখারচর, নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী পশ্চিমপাড়া ও গোবিন্দনগর ছয় আনী পাড়া, নকলা উপজেলার কৈয়াকুড়ি এবং ঝিনাইগাতি উপজেলার বনগাও চতল গ্রামে পৃথকভাবে রবিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হয়। এদিন সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে পৃথক এসব স্থানে মুসল্লীরা পবিত্র পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। প্রত্যেকটি ঈদের জামাতে র্অধ শতাধিক মুসল্লী অংশ নেন। এসব জামায়াতে পুরুষ মুসুল্লীদের পাশাপাশি নারী মুসল্লীরাও পর্দার ভিতরে নামাজে অংশ নেন। নামাজের পর পারস্পরিক কোলাকুলি শেষে তারা অংশ নেন প্রীতিভোজে।

নারায়ণগঞ্জ

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রত্যেকবারের মত নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা পবিত্র ঈদুর ফিতরের নামাজ আদায় করেছে হানাফি (রা.) মাযহাবের অনুসারীরা। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ফতুল্লায় লামাপাড়ায় হযরত শাহ্ সুফী মমতাজিয়া এতিম খানা ও হেফজ খানা মাদ্রাসায় ‘জাহাগিরিয়া তরিকার’ কয়েকশ অনুসারী এ ঈদের নামাজ আদায় করেন। জামাতে গাজীপুরের টঙ্গী, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, পুরাতন ঢাকা, ডেমরা, সাভার এবং নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ,বন্দর ও সোনারগাঁ উপজেলা থেকে দুই শতাধিক মুসল্লি অংশ নেয়। হযরত শাহ্ সুফী মমতাজিয়া মাদ্রাসার মুফতি মাওলানা আনোয়ার হোসেন শুভ জানান, তারা হযরত হানাফি (রা:) মাযহাবের অনুসারী। হানাফির মাযহাবের মতে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলে ঈদ পালন করার বিধান রয়েছে। জাহাগিরিয়া তরিকার অনুসারীরা গত একশ বছর আগ থেকে বিশ্বের যেকোন প্রান্তে চাঁদ দেখা অনুযায়ী রোজা ও ঈদ পালন করে আসছে। এই কারণে তারা আজ ঈদযাপন করছেন।

মাদারীপুর

মাদারীপুরের চারটি উপজেলার ২৫ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মুসলিম মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে রবিবার ঈদ উদযাপন করছেন। জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান ও বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সদর উপজেলার তাল্লুক গ্রামের চরকালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। সকাল ৯টায় এ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ পড়ান ইমাম আবদুল হাশেম ফকির।

বরিশাল

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের জাহাঁগিরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া মসজিদ, উত্তর সাগরদী মৃধাবাড়ি শাহসুফি মমতাজিয়া মসজিদ, হরিনাফুলিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া মসজিদ এবং জিয়া সড়ক শাহসুফি মমতাজিয়া মসজিদে রবিবার ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

পটুয়াখালী

পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ রবিবার ঈদ উদযাপন করছে। পটুয়াখালীর নিশানাবাড়িয়া, বাউফলের মদনপুরা, বগা, জৌতা, শাবুপুরা, ঝিলনা, গলাচিপার ডাউকা ও কলাপাড়ার কয়েকটি গ্রামের লোকজন সকালে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।

মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন ১০টি গ্রামের দেড় শতাধিক মানুষ। শহরের সার্কিট হাউস এলাকার আহমেদ শাবিস্তা বাসার ছাদে রবিবার সকাল সোয়া ৭টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

বরগুনা

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রবিবার বরগুনার ১৬টি গ্রামের প্রায় আড়াই হাজার মানুষ পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করছেন। হযরত কাদেরিয়া চিশতিয়া তরিকাপন্থী এসব গ্রামের মানুষ প্রতি বছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ পালন করে থাকেন। বরগুনা পৌর শহরের আমতলা, সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাজরাভাঙ্গা, কালিরতবক, গৌরীচন্না ইউনিয়নের ধুপতি ও গৌরীচন্না, বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নের কাজিরাবাদ, বকুলতলী ও চান্দখালী, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোজখালী, কুকুয়া ইউনিয়নের কুকুয়া, আউয়াল নগর ও উত্তর তক্তাবুনিয়া, পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের সিংড়াবুনিয়া ও কাকচিড়া, তালতলী উপজেলার পশ্চিম ঝারাখালী ও করইবারিয়া গ্রামের মানুষ ঈদ করছে।

চাঁদপুর

চাঁদপুরের ৩০টি গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আগাম ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। চাঁদপুরের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত রবিবার সকাল ১০টায় সাদ্রা ফাজিল মাদ্রসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াতে ইমামতি করেন মাওলানা আরিফ চৌধুরী। সাদ্রা দরবার শরীফের তৎকালীন পীর মাওলানা ইসহাক আরব দেশসমূহের সঙ্গে মিল রেখে আগাম রোজা রাখাসহ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালনের নিয়ম চালু করেন। হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা গ্রামে ১৯২৮ সাল থেকে এই প্রথা চালু হলেও এখন লক্ষাধিক মানুষ তা অনুসরণ করছে।

পিরোজপুর

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় উপজেলার পাঁচ গ্রামে রবিবার উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এ উপজেলার শুরেশ্বর পীরের অনুসারী প্রায় ছয় শতাধিক পরিবার ঈদ পালন করছে। প্রতি বছরের মতো এবছরও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ২৭ মে (শনিবার) থেকে এ উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের ভাইজোড়া, কচুবাড়িয়া, সাপলেজা, ঝাটিবুনিয়া ও খেতাছিড়া গ্রামের প্রায় ছয় শতাধিক পরিবার রোজা শুরু করেন।

(Visited 11 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here