কলামিস্টঃ আর.এম।।।
ডিভোর্সি নারী মানেই আমাদের সমাজে ভয়ঙ্কর এক অপরাধী!
কোনো নারী ডিভোর্স দিয়েছে তার স্বামীকে? এমন আলোচনা ধরে আশপাশের মানুষ ধরেই নেয়, মেয়েটি ভালো না, কারো সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক আছে। এ কারণেই স্বামীকে সে ডিভোর্স দিয়েছে। কী মেয়ে রে বাবা! এটা তো আস্তো একটা বেশ্যা না হলে কী আর অমন সুন্দর, ভালো মানুষটারে ডিভোর্স দিতে পারে?
কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছে? এর বিপরীতে আশপাশের মানুষ বলতে শুরু করে দেয়, মেয়েটার স্বভাব চরিত্র ভালো না। ঘরে স্বামী রেখে অন্য কারো সাথে ফস্টিনস্টি করে বেড়ায়। শ্বশুর শাশুড়ির সাথে বনিবনা হয় না। ব্যবহার ভালো না। একাধিক ছেলে বন্ধু রয়েছে। তার চরিত্র একদম ভালো না। মেয়েটা একটা মাগি, বেশ্যা না হলে কী আর খালি খালি স্বামী তারে ডিভোর্স দিছে?
আমাদের সমাজে ডিভোর্সি নারীদের ঘিরে এসব কথা বেশ প্রচলিত। দিন বদলাচ্ছে, সময় বদলাচ্ছে অথচ কথার ধরণ, চিন্তার ধরণ একটুও বদলাচ্ছে না। এখনও একজন ডিভোর্সি নারীকে আমরা ভালো চোখে দেখতে পারি না। বরং নানা কথার বানে তার জীবনটাকে দুর্বিষহ করে তুলি। প্রতিমুহূর্তে তাকে খুচিয়ে খুচিয়ে ‘বেশ্যা’ উপাধি দিই! বেশ্যা না হলে সে ডিভোর্স দিত না পেতও না বলে ভেবে নিই! অথচ এর নেপথ্যে অনেক কারণ থাকতে পারে, নারীও যে মানুষ, তারও সিদ্ধান্ত দেয়ার এবং নেয়ার অধিকার আছে, সে ভাবনাটা আমরা একবারও ভেবে দেখি না।
ডিভোর্সি নারী মানেই আমাদের সমাজে ভয়ঙ্কর এক অপরাধী! সে ডিভোর্স দিয়েছে বা পেয়েছে তাই সে অপরাধ করে ফেলেছে! যার কারণে ঘর থেকে শুরু করে বাইরের মানুষগুলোও তাকে নিয়ে নানা কিচ্ছা করতে থাকে। তার চরিত্রের ভালো মন্দের ব্যাবচ্ছেদ করতে থাকি আমরা। আমরা ধরেই নিই মেয়েটি যেহেতু ডিভোর্সি সেহেতু সে বেশ্যা! কিন্তু একজন মানুষের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলার অধিকার আমাদের কে দিয়েছে? একজন নারীকে অবলিলায় বেশ্যা উপাধি দেয়া কী আমাদের দৈন্যতা নয়? সভ্য সমাজ সভ্য মস্তিষ্ক কখনোই একজন নারী চরিত্রের এমন বিচার বিশ্লেষণ করতে পারে না। এতে করেই বোঝা যাচ্ছে বাহ্যিকভাবে আমরা সভ্যতার লেবাস এঁটে চললেও আদতে তা নই; এখনও সেই পশ্চাৎপদের অসভ্যই রয়ে গেছি।
একটা সময় স্বামী, শ্বশুর বাড়ির লোকদের নানা অন্যায় অত্যাচার সহ্য করে সংসার করেছেন নারীরা। সব কিছুই মুখ বুজে সহ্য করেছেন। মেনে নিয়েছেন অনেক অন্যায়। মানিয়ে নিয়েছেন সংসার জীবনে। এ ছাড়া তাদের সামনে কোনো পথও খোলা ছিল না। তাদের সামনে ছিল না শিক্ষা, কাজের সুযোগ। এমনকী তাদের মধ্যে ছিল না তেমন কোনো সচেতনতা। এখন আর সেসময় নেই। সময় বদলেছে। পরিবেশও পাল্টেছে। কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী এগিয়ে যাচ্ছে। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। চিন্তা করার সুযোগ পাচ্ছে। সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো যোগ্যতা অর্জন করছে। এই অবস্থায় আজকের নারীরা পশ্চাৎপদের নারীদের মতো পরে পরে মার খাবে কেন?
তবে অপ্রিয় হলেও সত্যি যে, এখনও এই যুগে এসেও অনেক নারী সমাজ সংসারের নিন্দার ভয়ে কুঁকড়ে থাকে, সাহস করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, দিতে পারে না! বলতে পারে না বুকের ভেতরে জমে থাকা না বলা কথা। ছিড়তে পারে না তারা পায়ে পরানো পুরুষতন্ত্র ও ধর্মের অদৃশ্য শিকল। যার কারণে এখনও খবর পাই অমুক স্থানে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন, তমুক স্থানে যৌতুকের বলি গৃহবধূ ইত্যাদি ইত্যাদি।