কোচ ও ইঞ্জিন সংকটের অজুহাতে লাভজনক ট্রেন চালানোর প্রস্তাবে অনীহা প্রকাশ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থী পরিবহনে চট্টগ্রাম শহর থেকে সীতাকুণ্ডের কুমিরা পর্যন্ত বিশেষ ট্রেন চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (আইআইইউসি) কর্তৃপক্ষ। দেশের এই দ্বিতীয় শাটল ট্রেন সার্ভিস চালু করতে রেল প্রশাসন ও আইআইইউসি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে অনেক দূর এগিয়ে যায়। তবে শেষ মুহুর্তে আইআইইউসি’র প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেয় রেলওয়ে প্রশাসন। এতে প্রতিবছর প্রায় আড়াই কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই আইআইইউসি’র পক্ষ থেকে একজোড়া শাটল ট্রেন চালানোর প্রস্তাব দেয়। বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের চট্টগ্রাম শহর থেকে সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরাতে পরিবহনের স্বল্প দূরত্বে ট্রেন চালানোর বিনিময়ে আকর্ষণীয় ভাড়া প্রস্তাবও করে আইআইইউসি। প্রস্তাবটি রেলের একাধিক মাধ্যম ঘুরে মাঝপথে এসে হঠাৎ থমকে গেছে।
আইআইইউসি’র বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের সদস্য মোহাম্মদ নুরুল্লা বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থীর চলাচলে এক জোড়া শাটল ট্রেন চালানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। রেলের সকল শর্ত মেনে নিয়ে শিক্ষার প্রশ্নে ট্রেন সার্ভিসের কথা জানিয়েছি। এ জন্য সরকারের অনেকেই সুপারিশও রয়েছে। কিন্তু অজানা কারণে এখনো পর্যন্ত প্রস্তাবটি পাশ হয়নি।
তিনি বলেন, রেলের রাজস্ব আয় ছাড়াও দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় রেললাইন থাকায় রেলওয়ে সার্ভিসটি চালু করলে রেলওয়ে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ছাড়াও সড়ক পথের উপর চাপ কমবে বলেও জানান তিনি। তবে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রীক প্রকৌশলী (সিএমই) মনজুর উল আলম চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, আইআইইউসি প্রতিদিন সকাল ও বিকালে দুই জোড়া শাটল ট্রেন পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছিল। এ জন্য রেলের নির্ধারিত ভাড়া, ইঞ্জিন ও কোচ হায়ার চার্জ এবং রেলের সব ধরনের শর্ত মেনে নিতে রাজী রয়েছে। প্রস্তাবটি রেলের বিভিন্ন দফতর হয়ে যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগে পাঠানো হলে সেখান থেকে প্রস্তাবটির বিষয়ে প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়।
রেলওয়ের একাধিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রেলের একাধিক ট্রেন নির্দিষ্ট গন্তব্য থেকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে এসে দীর্ঘ সময় অলস বসে থাকে। এসব ট্রেনকে বসিয়ে না রেখে স্বল্প দূরত্বের গন্তব্যে পরিচালনা করা গেলে রেলের আয় অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব। আইআইইউসি শিক্ষার্থীদের পরিবহনের স্বার্থে একটি লাভজনক প্রস্তাব দিয়েছে। এমনকি রেলের সব ধরনের শর্ত মেনে নিতে রাজী ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। পরিবহন, বাণিজ্যিক বিভাগসহ প্রায় সবগুলো সংস্থা নতুন শাটল ট্রেন চালানোর বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছালেও রেলের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের অনাগ্রহে সার্ভিসটি পরিচালনা করা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না। রেলের দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ কিংবা চীন থেকে আমদানি করা ডেমু ট্রেন দিয়ে প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হলে রেলওয়ে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারত বলে জানিয়েছেন তারা।
অভিযোগ রয়েছে, পরিবহন, বাণিজ্যিক বিভাগসহ রেলের প্রায় সবগুলো সংস্থা নতুন শাটল ট্রেন চালানোর বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছালেও বিভিন্নভাবে যান্ত্রীক বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার ‘অনৈতিক’ সুবিধা না পাওয়ায় এমন অনীহা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলেও লোকমুখে গুঞ্জন রয়েছে। তবে ট্রেন না চালানোর জন্য কোচ ও ইঞ্জিন সংকটের কথা বলা হলেও ‘আসল রহস্য’ চিহ্নিত করতে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।