আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের স্থান হবে না। সাথে সাথে প্রত্যেকটা ছাত্র-ছাত্রীকে অনুরোধ করব-মাদকাশক্তি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকতে হবে। এই পথে যারা যাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিব, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, একটা ছেলে-মেয়ের জীবন অনেক মূল্যবান। তারা বেঁচে থাকলে দেশে ও জাতিকে অনেক কিছু দিতে পারবে। নিজেদের ধ্বংসের পথে ঠেলে দিবে, এটা কখনো হয় না। এটা চলতে পারে না।।’
ছাত্রলীগের ৬৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার ( ২৪ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে সারাদেশে নিজ নিজ এলাকায় নিরক্ষর মানুষ খুঁজে বের করে তাদেরকে অক্ষর জ্ঞান দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া হুমকি দিল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে ছাত্রদলই যথেষ্ট; ছাত্রদল দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে দেশকে ধ্বংস করা তাদের লক্ষ্য ছিল। আমি তখন ছাত্রলীগের হাতে কাগজ-কলম তুলে দিয়েছিলাম, বই তুলে দিয়েছিলাম…। আমরা বাংলাদেশেকে নিরক্ষর মুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম। তাই ছাত্রলীগের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীর প্রতি আমরা আহ্বান থাকবে প্রত্যেকের নিজ নিজ গ্রাম ভিত্তিক এলাকায় অর্থাৎ নিজ এলাকায় কোনো নিরক্ষর মানুষ আছে কিনা, খোঁজ নিতে হবে, নিরক্ষর মানুষকে অক্ষর জ্ঞান দিতে হবে, কাজ করতে হবে যাতে বাংলাদেশকে দ্রুত নিরক্ষর মুক্ত করতে পারি।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমরা চাই আমাদের ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে। তাই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলেতে হবে। কারণ, এগুলো একটা মানুষকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দেয়। মাদকাশক্তি শুধু একজন মানুষ নয়, একটি পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। জঙ্গিবাদের যে নতুন উৎপাত শুরু হয়েছে, শুধু বাংলাদেশে নয়, এটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এর উৎসটা কী? ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। সন্ত্রাস-আত্মঘাতী হলে বেহেস্তে যেতে পারে না। তাকে দোজখে যেতে হয়।’
শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অবাক লাগে, ইংলিশ মিডিয়ামে যারা পড়ে তার কিভাবে জঙ্গিও পথে যায়! জঙ্গিবাদ হলে তার বেহেস্তে যাবে? এই পর্যন্ত যারা জঙ্গি পথে গেছে তারা কি খবর পাঠিয়েছে যে তারা বেহেস্তে গেছে? সেই খবরটা কেউ দিতে পারিনি। পাঠিয়েছে কেউ বলতে পারবে? পারবে না। তাহলে এই পথে কেন যায়?’
ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ শিক্ষা গ্রহণ করলে কেউ হাইজ্যাক, চুরে করে নিতে পারবে না। ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীদের বলব, শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আমি বলতে চাই না অশিক্ষিতের হাতে দেশ পড়লে দেশের কী হয়, পঁচাত্তরের পর তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।’
শেখ হাসিনা আরো বলেছেন, ‘পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খুনি মোসতাক দালালি করে মন্ত্রী হয়েছিল। তিন মাসও টিকতে পারেনি। মিরজাফররা কেউ টিকতে পারিনি। কারণ, তার পেছনে ছিল জিয়াউর রহমান। সে সামনে এসেছিল। অবৈধভাবে সেনা আইন লঙ্ঘন করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছিল। যুদ্ধাপরাধী, সাতখুনের আসামীদের মুক্তি দিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। তার স্ত্রী খালেদা জিয়া মেট্রিকও পাস করতে পারেনি ফলে তাদের সময়ে শিক্ষার হার কমেছিল, সাক্ষরতার হার কমেছিল।’
কী অপরাধ ছিল আমরা বাবার তাকে কেন স্বপারিবারে হত্যা করা হয়েছিল এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা এনে দেওয়ার পর যারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দোসর ছিলেন, যারা আমার মা-ভাই বোনদের তুলে দিয়েছিলেন, যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কথা বলেছে, যারা বাঙালির বিজয় মানতে পারেনি, তারা বিজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে। একটা পর একটা ক্যু হয়েছে। নির্যাতন নেমে এসেছিল আমাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর। মুক্তিযুদ্ধাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে।তারা ভেবে ছিল আওয়ামী লীগ আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। তারা স্বাধীনতার ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করে যাবে। কিন্তু সেটা তারা পারেনি।’
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীদের পড়তে হবে। এ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করা ছাত্রলীগের মতো আদর্শিক সংগঠন থাকলে কেউ বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে পারবে না। আন্দোলন-সংগ্রামে প্রথম নির্দেশ দিতেন ছাত্রলীগকে। বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে আর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সেই অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রলীগ।’
ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, এস এম জাকির হোসাইন।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সম্মাননা
১৯৭২ সালের পর থেকে যারা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে সম্মাননা পদক ও উত্তরিও দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সাবেক নেতারা পদক গ্র্রহণ করেছেন।
পদক গ্রহণ করেন- ১৯৭২-৭৩ সালের ছাত্রলীগ সভাপতি ও বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের নেতা ইসমত কাদের গামা। ১৯৮১-৮৩ সালের সভাপতি ও বর্তমান বিএমএ এর সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, একই কমিটির সাধরণ সম্পাদক খ ম জাহাঙ্গীর। ১৮৮৩-৮৫ সালের সভাপতি আব্দুল মান্নান, একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক । ১৯৮৬-৮৮ ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। ১৯৮৮-৯২ সালের কার্যকারী সভাপতি শাহে আলম ও সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। ১৯৯২-৯৪ সালের সভাপতি মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ইকবালুর রহিম। ১৯৯৪-৯৮ সালের এ কে এম এনামুল হক শামীম ও সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না, ১৯৯৮-২০০২ সালের সভাপতি বাহাদুর বেপারী ও সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন, ২০০২-০৬ সালের লিয়াকত শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু, ২০০৬-১১ কমিটির সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার রোটন, ২০১১-১৫ কমিটির সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ।