বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও গৃহঋণ চান

0
578

Sharing is caring!

সরকারের ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক থেকে পাঁচ শতাংশ সরল সুদে (সুদের ওপর সুদ নয়) সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণ পাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা। তবে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ ঋণের আওতায় নেই। তাই তাদের এ ঋণের আওতায় আনা যায় কি-না ভেবে দেখতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।

- Advertisement -

বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব হাবিবুর রহমান অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বরাবর চিঠিটি লিখেছেন।

চিঠিতে বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য ৫ শতাংশ সরল সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধা প্রদানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

এতে আরও বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের গৃহনির্মাণ ঋণ সংক্রান্ত নীতিমালা অর্থ বিভাগ হতে গত ৩০ জুলাই জারি করা হয়। এ নীতিমালা শুধু সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে। এ অবস্থায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৫ শতাংশ সরল সুদে গৃহ নির্মাণ ঋণ সুবিধা পেতে পারেন কি না- এ বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন হতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এর আগে গত ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক শিবলী রুবাইতুল ইসলাম ও সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল স্বাক্ষরিত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর লিখিত চিঠিতে বলা হয়, ‘ইতোমধ্যে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ৫ শতাংশ সরল সুদে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদানে চারটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।’

‘অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তারা গাড়ি ক্রয়ের জন্য ঋণ সুবিধা ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ পেয়ে থাকেন। উল্লেখিতি সুবিধা আজ মৌলিক চাহিদার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের এ যুগোপযোগী উদ্যোগসমূহকে আমরা সাধুবাদ জানাই।’

‘তবে দেখা যাচ্ছে যে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য উপরোক্ত ঋণসমূহ রাখা হয়নি। উল্লেখ্য, যে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকার ঘোষিত জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা, পেনশন ইত্যাদি পেয়ে থাকেন।’

এমতাবস্থায় গৃহনির্মাণ ঋণ ও গাড়ি সুবিধা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যেন পান সে জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ সাপেক্ষে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

এদিকে সরকারি কর্মচারীদের ব্যাংক থেকে পাঁচ শতাংশ সরল সুদে (সুদের ওপর সুদ নয়) সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণ দেয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এ জন্য সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (বিএইচবিএফসি) সঙ্গে এই সমঝোতা স্মারক সই করেছে অর্থ বিভাগ।

সরকারের নবীন কর্মীরাও যেন একটি ফ্ল্যাট বা বাড়ির মালিক হতে পারেন সেজন্য একটি নীতিমালা করার কথা জানিয়ে গত জুনে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, জুলাইয়ে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছর থেকেই তা কার্যকর হবে। এরপর ৩০ জুলাই অর্থ বিভাগ থেকে ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং-ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮’ প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন। আর আবেদনের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা হবে ৫৬ বছর। এ ঋণের সীমা ঠিক করা হয়েছে ২০ লাখ থেকে ৭৫ লাখ টাকা। ঋণ পরিশোধের জন্য সর্বোচ্চ সময় হবে ২০ বছর।

এ ঋণের জন্য ব্যাংক ১০ শতাংশ হারে সরল সুদ নেবে। অর্থাৎ চক্রবৃদ্ধি সুদ (সুদের ওপর সুদ) নেয়া হবে না। তবে ঋণগ্রহীতাকে দিতে হবে ৫ শতাংশ। বাকিটা সরকারের পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হবে ভর্তুকি হিসাবে। শুধু বেসামরিক সরকারি কর্মচারীরা যারা স্থায়ী পদে চাকরি করেন তারাই এই ঋণ পাবেন। সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক, খণ্ডকালীন, অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত এবং সাহিত্য স্বাসিত প্রতিষ্ঠানের কেউ এই ঋণ পাবেন না।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, গৃহঋণ দিতে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য একটি অভিন্ন আবেদনপত্র তৈরি করা হয়েছে। আবেদনপত্রের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র, চাকরি স্থায়ীকরণপত্র, বেতনের রশিদ, সম্ভাব্য পেনশন থেকে আয়, ব্যাংকের হিসাব বিবরণী এবং অন্য ব্যাংকে ঋণ থাকলে সে সম্পর্কিত কাগজ জমা দিতে হবে। ঋণ নেয়ার জন্য সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান মনোনীত করার আগে অর্থ বিভাগের গৃহঋণ সেলের অনুমতি নিতে হবে। তবে এ কার্যক্রম যখনই বাস্তবায়ন হোক না কেন বয়সসহ অন্যান্য সব শর্ত গত ১ জুলাই থেকে বিবেচনা করা হবে।

কার জন্য কেমন ঋণ:

জাতীয় বেতন স্কেলে প্রথম থেকে পঞ্চম গ্রেডভুক্তরা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের (উপ-সচিব থেকে সচিব পদমর্যাদার) জন্য ৭৫ লাখ, জেলা সদরের জন্য ৬০ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারবেন।

৬ষ্ঠ থেকে ৯ম গ্রেডভুক্তরা ঢাকাসহ বিভাগীয় সদর এলাকার জন্য ৬৫ লাখ, জেলা সদরের জন্য ৫৫ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৪৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।

১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডভুক্তরা ঢাকাসহ বিভাগীয় সদরের জন্য ৫৫ লাখ, জেলা সদরের জন্য ৪০ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।

১৪তম থেকে ১৭তম গ্রেডভুক্তরা ঢাকাসহ বিভাগীয় সদরের জন্য ৪০ লাখ, জেলা সদরের জন্য ৩০ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ২৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।

১৮তম থেকে ২০তম গ্রেডভুক্তরা ঢাকাসহ বিভাগীয় সদরের জন্য ৩০ লাখ, জেলা সদরের জন্য ২৫ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ২০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ব্যক্তিগত জমির ওপর বাড়ি তৈরি করতে চাইলে ঋণের আবেদনপত্রের সঙ্গে জমির মূল মালিকানা দলিল জমা দিতে হবে। শুধু তাই নয়, মালিকানা পরম্পরার তথ্যও দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সিএস, এসএ, আরএস এবং বিএস রেকর্ডের তথ্য। এ ছাড়া জেলা বা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ১২ বছরের নির্দায় সনদ নিতে হবে। ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে মালিকানার দলিল জমা রাখতে হবে।

সরকারি প্লট বা সরকার থেকে ইজারা নেয়া জমিতেও বাড়ি তৈরি করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ঋণ আবেদনের সঙ্গে প্রথমেই জমা দিতে হবে প্লটের বরাদ্দপত্রের প্রমাণপত্র। এ ছাড়া দখল হস্তান্তরপত্র, মূল ইজারার দলিল ও বায়া দলিলের প্রমাণপত্র দিতে হবে। ঋণ আবেদনপত্রের সঙ্গে আরও জমা দিতে হবে নামজারি খতিয়ানের জাবেদা নকল, খাজনা রসিদ ও আমমোক্তারনামা দলিল।

জমিতে ডেভেলপারকে দিয়ে বাড়ি তৈরি করলে জমির মালিক এবং ডেভেলপারের সঙ্গে নিবন্ধন করা ফ্ল্যাট বণ্টনের চুক্তিপত্র, অনুমোদিত নকশা, ফ্ল্যাট নির্মাণস্থলের মাটি পরীক্ষার প্রতিবেদন, সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্ধারিত ছকে ইমারতের কাঠামো নকশা ও ভারবহন সনদ জমা দিতে হবে।

এ ছাড়া ডেভেলপার কোম্পানির সংঘ স্মারক, সংঘবিধি ও রিহ্যাবের নিবন্ধন সনদ, নকশা অনুযায়ী কাজ করার ব্যাপারে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের দেয়া অঙ্গীকারনামা, অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ নেই- মর্মে ডেভেলপারের দেয়া স্ট্যাম্প পেপারে ঘোষণাপত্রও থাকতে হবে।

(Visited 1 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here