বাবা, টয়লেট দাও!

0
381

Sharing is caring!

বাবার কাছে মেয়েদের কত রকমের আবদারই না থাকে। ছোট্ট মেয়েটির আবদার ওই একটাই—টয়লেট বানিয়ে দিতে হবে। একটা ভালো শৌচাগার। বাবা শর্ত দিলেন, পরীক্ষায় প্রথম হলে ওটি হবে। শান্তির শৌচাগারের আশায় মেয়েও আড়মোড়া ভেঙে পড়ে পরীক্ষায় প্রথম হয়ে গেল। কিন্তু বাবা আর টয়লেট বানিয়ে দেন না। মেয়েটিও দমার পাত্রী নয়। বাবার বিরুদ্ধে ‘প্রতারণার’ অভিযোগ তুলে বসল সে। পুলিশকে লিখল, এসো তো বাপুরা, বাবাকে জেলে ঢোকাও।

- Advertisement -

গত সোমবার ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের আম্বুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

এই গ্রামে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে হানিফা। তাঁদের বাড়িতে কোনো টয়লেট নেই। প্রতিবেশী অনেকের বাড়িতেই আছে। হানিফা যখন আরও ছোট, তখন থেকেই বিষয়টিতে খুব লজ্জা পেত সে। বাইরে টয়লেট করতে যেতে ওই টুকুন মেয়েরও মাথা হেঁট হয়ে যেত। বাবাকে বলার পর তিনি হানিফাকে প্রতিশ্রুতি দেন, পরীক্ষায় প্রথম হলে টয়লেট বানিয়ে দেবেন। এই প্রতিশ্রুতিতে সেই নার্সারি থেকে প্রথম হচ্ছে হানিফা। অথচ বাড়িতে এখনো শোচাগার তৈরি করে দেননি বাবা।

বিবিসি অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হানিফা বলেছে, ‘বাইরে গিয়ে টয়লেট করতে আমার লজ্জা খুব লাগে। সবাই যখন আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, আমার খুব খারাপ লাগে।’ তার স্কুলে খোলা স্থানে পয়োনিষ্কাশনের ক্ষতি সম্পর্কে জানার পর এ বিষয়ে সে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে।

পুলিশের কাছে লেখা চিঠিতে হানিফা লিখেছে, বাবা তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যদি সে ক্লাসে প্রথম হয়, তাহলে বাড়িতে শৌচাগার বানিয়ে দেবেন। হানিফা বলে, ‘নার্সারি থেকে আমি আমার ক্লাসে সবচেয়ে ভালো ফল করছি।’ হানিফার অনুরোধ, যদি এই অপরাধে বাবাকে গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে পুলিশ যেন অন্তত তাঁর কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে রাখে যে কবে তিনি বাড়িতে শৌচাগার বানিয়ে দেবেন।

ভারতে এখনো বহু পরিবার শৌচাগার সুবিধার বাইরে রয়েছে। ইউনিসেফের তথ্যমতে, ভারতের অন্তত ৫০ কোটি মানুষ ঘরের বাইরে খোলা স্থানে প্রাকৃতিক কাজ সারে।

হানিফার বাবা এহসান উল্লাহ জানান, তিনি শৌচাগার বানানোর কাজ শুরু করেছেন, তবে অর্থের অভাবে কাজ শেষ করতে পারছেন না। এখন তাঁর হাতে কোনো কাজকর্মও নেই। মেয়ের কাছে সময় চেয়েছিলেন। তবে মেয়ে রাগ করে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে।

হানিফা এতটুকু নরম নয় এ বিষয়ে। সে বলে, ‘একই বিষয় নিয়ে তাঁকে আমার কত দিন বলতে হবে? তিনি আমাকে একই অজুহাত দিয়েই যাচ্ছেন। এ জন্য আমি পুলিশের কাছে গেছি।’

গত সোমবার মায়ের সঙ্গে হানিফা স্কুলের পাশের থানায় গিয়ে হাজির হয়। ব্যাগে করে নিয়ে যায় বিভিন্ন সময় পাওয়া ট্রফি ও সার্টিফিকেট। থানায় এসে সেগুলো টেবিলে সাজিয়ে রাখতে শুরু করে হানিফা। পুলিশের কাছে জানতে চায়, ‘তোমরা কি আমাকে একটি টয়লেট করে দিতে পারবে?’ এরপর পুলিশ হানিফার বাবা এহসান উল্লাহকে ডেকে পাঠায়। এহসান উল্লাহ থানায় এসে হানিফাদের দেখে বিস্মিত হন।

পুলিশ কর্মকর্তা ভালারমাথি বলেন, ‘অভিযোগটি খুব সৎ ও সরল। আমরা সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছি।’

হানিফার এই চিঠি জেলা কর্মকর্তাদেরও টনক নড়িয়েছে। তাঁরা হানিফা ও তার প্রতিবেশীদের জন্য পাঁচ শর বেশি শৌচাগার বানানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ শুরু করেছেন।

২০১৯ সালের মধ্যে ভারতের প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার স্থাপনের পরিকল্পনা করে দেশটির সরকার। তবে অনেক স্থানে সেই পরিকল্পনা বাধার মুখে পড়ে। সাম্প্রতিক এক জরিপে জানা গেছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী ৮৯ শতাংশ ভারতীয় খোলা স্থানে টয়লেট করতে পছন্দ করে। কারণ, তারা চায় না বাড়ির কাছাকাছি স্থানে শৌচাগার থাকুক।

(Visited 1 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here