শেষ বলতে ইচ্ছে করছে না মাশরাফি

0
240
মাশরাফি
মাশরাফি

Sharing is caring!

বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়ার আগ মুহূর্তে মাশরাফির মনে যখন অন্য রকম অনুভূতি তৈরি হচ্ছে, তখন কান পাতলে শোনা যাচ্ছে বিদায়ের করুণ সুর। এটিই যদি দেশের মাঠে তাঁর শেষ ম্যাচ হয়, সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে বেশি প্রশ্ন হওয়ার কথা। আশ্চর্য, এটা নিয়ে একটা প্রশ্নও হলো না তাঁর ২২ মিনিটের দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনে!

প্রায় ২২ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন হলো অন্তত ১৮টি। এই ১৮ প্রশ্নের একটিও মাশরাফি বিন মুর্তজার বিদায়-সংক্রান্ত নয়। অথচ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডের পর কতবার তাঁকে শুনতে হলো, ‘মিরপুরে এটাই কি আপনার শেষ?’

- Advertisement -

‘মিরপুরে শেষ হওয়া’ নিয়ে যদি এত প্রশ্ন হয়, সিলেটে তো আরও বেশি হওয়ার কথা। ২০১৯ বিশ্বকাপকে যদি মাশরাফি ক্যারিয়ারের ‘ফিনিশিং লাইন’ ভাবেন, তবে সিলেটের ওয়ানডেটা দেশের মাঠে অধিনায়কের শেষ ম্যাচ হিসেবে ধরতে হবে। যদিও শেষ কি না, এ প্রশ্নে মাশরাফি আগের মতোই বলবেন, ‘বলতে পারছি না কী হবে সামনে। হতেও পারে, না–ও হতে পারে।’

তবে দেশের মাঠে ‘মাশরাফির শেষ’ ধরে সাংবাদিক থেকে শুরু করে দর্শক—আগ্রহের কমতি নেই! সিলেট স্টেডিয়ামে এর আগেও আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে। এই তো কদিন আগে বিশাল ঢাকঢোল পিটিয়ে টেস্ট অভিষেক হয়েছে দৃষ্টিজুড়োনো এই ভেন্যুটির। গত বছর বিপিএল থেকেই ভীষণ পরিচিতি পেয়েছে মাঠটি। তবুও এমন দৃশ্য আগে চোখে পড়েনি, যেটা আজ দেখা গেল।

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের প্রথম গেটের টিকিট বুথে শুধু ‘উপচে পড়া’ ভিড় বলা বললেও যেন কম বলা হয়! নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো সবাই দীর্ঘ লাইন ধরেছে—‘ভাই, একটা টিকিট চাই!’ দর্শকদের সারি স্টেডিয়াম গেটের সামনে দিয়ে চলে যাওয়া বিমানবন্দর সড়কে পর্যন্ত চলে এসেছে। টিকিটের জন্য ব্যাকুল দর্শক সামলাতে বিসিবি কর্মী, আনসার, পুলিশের সদস্যরা ঘেমে-নেয়ে একাকার! সিলেটে প্রথম ওয়ানডে, সেটিও আবার রূপ নিয়েছে ‘ফাইনালে’—এ ম্যাচ ঘিরে দর্শকদের আগ্রহ তো থাকবেই। তবে এবার আগ্রহের পারদটা সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছেছে যে মাশরাফির কারণে, বললে ভুল হবে না।

এ ম্যাচ নিয়ে সংবাদমাধ্যমেরও যে ভীষণ আগ্রহ, সেটি প্রেসবক্স দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টেও আসেননি এমন অনেকে এসেছেন ম্যাচটা কাভার করতে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফিকে বিদায়-সংক্রান্ত একটা প্রশ্নও করেননি কেউ। একজন প্রশ্ন করলেন তাঁর এক বিশেষ অর্জন নিয়ে। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের নিয়মিত অধিনায়কেরই দায়িত্ব পেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্ট ম্যাচেই ছিটকে পড়েন মাঠ থেকে। সেন্ট ভিনসেন্টে ওই ঘটনার পর ফিরে এসে আবার অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন। ২০১০ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে চোট পেয়ে আবারও তাঁকে চলে যেতে হয় মাঠের বাইরে। ২০১১ বিশ্বকাপে বাদ পড়াটা তাঁর জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা। প্রায়ই বলেন, অধিনায়কত্ব দূরে থাক, ২০১১ বিশ্বকাপে বাদ পড়ার পর ক্যারিয়ারটা আর এগোবে কি না, সেটি নিয়েই ছিলেন অনিশ্চিত। মাশরাফি তবুও ফিরেছেন, সংশপ্তক হয়ে লড়েছেন। পুরস্কার হিসেবে জাতীয় দলকে লম্বা সময়ের জন্য নেতৃত্ব দেওয়ার স্বাদ পেয়েছেন ২০১৪ সালের অক্টোবরে, যেটি এখনো চলছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে সফলতম অধ্যায় রচিত হয়েছে তাঁরই নেতৃত্বে।

গত ওয়ানডেতে ছুঁয়েছিলেন হাবিবুল বাশারকে। কাল টস করতে নামলেই হাবিবুলকে টপকে রেকর্ডটা নিজের করে নেবেন মাশরাফি। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে ম্যাচে (৭০) নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ডটা হবে তাঁরই। মাশরাফি কীভাবে দেখছেন এই অর্জন? অধিনায়ক জানালেন, কখনো ভাবেননি আসতে পারবেন এতটা দূর, ‘শুরু যেমন করেছিলাম, সে রকম আশা নিয়ে শুরু করিনি। দুবার অধিনায়কত্ব পেয়েছি। শুরুতে এক-দুই-তিন-চার-পাঁচ ম্যাচ পর চোটে পড়ে গিয়েছি। অধিনায়কত্ব নিয়ে কখনো ভাবিনি। আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বাংলাদেশের হয়ে খেলা। প্রথমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যখন (অধিনায়কত্ব) পাই, অনেক আশা ছিল। টেস্টে তখন দারুণ ছন্দে ছিলাম। ২০১৪ সালে যখন আবার পাই, তখন নিজেকে নিয়ে ভবিষ্যতে চিন্তা করা বা খেলোয়াড় হিসেবে কোনো কিছু ঠিক করতাম না। চলতে থাকুক যত দিন পারা যায়—এটাই ভেবেছি। এভাবে করতে করতে প্রায় চার বছর হতে যাচ্ছে। এটা আমার এবং আমার পরিবারের জন্য অনেক গর্বের ব্যাপার। বাংলাদেশ দলে লম্বা সময়ে অধিনায়কত্ব করতে পেরেছি। কাল যদি মাঠে নামতে পারি, ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি অধিনায়কত্ব করার সুযোগ হবে। অবশ্যই এটা অসাধারণ অনুভূতি।’

মাশরাফির মনে যখন অন্য রকম অনুভূতি, তখন কান পাতলে শোনা যাচ্ছে বিদায়ের করুণ সুর। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবারের মতো খেলতে এসেছেন সিলেটে। এই ‘প্রথম’ই যদি দেশের মাঠে তাঁর ‘শেষ’ হয়ে থাকে, এ অনুমানে সংবাদ সম্মেলন শেষে অনেক সাংবাদিক পেশাদারি আবরণ থেকে বেরিয়ে ছবি তুলতে চাইলেন অধিনায়কের সঙ্গে। তখন মাশরাফির রসিকতা, ‘শেষ ম্যাচ বলে ছবি তুলতে চান?’

সাংবাদিকেরা নিশ্চুপ। ‘ম্যাশ’কে নিয়ে যে তাঁদের শেষ বলতে ইচ্ছে করে না!

(Visited 1 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here