ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশেষ সেবাপক্ষ উদযাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
আগামী ৩০ মে থেকে ১২ জুন পর্যন্ত এই বিশেষ সেবাপক্ষ উদযাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক ও নদী বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার।
তিনি বলেন, ১৪ দিন বা ২ সপ্তাহব্যাপী সেবাপক্ষ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ নাগরিক ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের দেশের কোনো নদী বন্দরের টার্মিনালে প্রবেশ করতে ফি’র প্রয়োজন হবে না। অর্থাৎ তারা বিনা টিকিটে টার্মিনালে প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ নাগরিক, প্রতিবন্ধী ও গর্ভবতী মায়েদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টার্মিনালে প্রবেশ, অবস্থান ও নৌযানে আরোহণ করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, সেবাপক্ষ চলাকালে সব টার্মিনালে নারী, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ টয়লেট সুবিধা, টার্মিনালে ফ্রি হুইল চেয়ার ও অসুস্থদের জন্য স্ট্রেচারের ব্যবস্থা, যাত্রীদের তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে টার্মিনালে মেডিকেল টিম ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া, সব টার্মিনালে সুপেয় পানির ব্যবস্থা এবং মোবাইল চার্জিং পয়েন্ট স্থাপনসহ সব নদী বন্দর টার্মিনালে যাত্রীবান্ধব পরিবেশসহ যাত্রীদের সার্বিক সহায়তায় পর্যাপ্ত সংখ্যক সেচ্ছাসেবক রাখা হবে।
এছাড়া সব দপ্তরসহ নদী বন্দর টার্মিনালে হটলাইনসহ কন্ট্রোলরুম স্থাপন, সব টার্মিনালে বিআইডব্লিউটিএ ও পুলিশ হেল্প ডেক্সের ব্যবস্থা, সব নদী বন্দরে যাত্রীদের নৌ-যান চলাচল সংক্রান্ত তথ্যের বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রচারণাসহ মাইকিং করা, অভ্যন্তরীণ নৌ-পথে যাত্রীদের নিরাপদ, নিশ্চিত আনন্দময় ভ্রমণে পর্যাপ্ত তদারকি ব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ লক্ষ্যে এরইমধ্যে নৌযান মালিক, চালক-শ্রমিকদের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশনসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে নদী বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার বাংলানিউজকে বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়মানুযায়ী বরিশালে ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের কার্যক্রম প্রায় শেষের পথে।
বরিশালের নৌ-পথ, নদী বন্দর ও আশপাশের এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে বিআইডব্লিটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা বিভাগ, উদ্ধারকারী ইউনিট, ডুবুরি দলের পাশাপাশি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ, নৌ-পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিভেন্সের সদস্যরা এবং একটি মেডিকেল টিম বন্দরে সদা প্রস্তুত থাকবেন।
পাশাপাশি যাত্রীদের সার্বিক সহায়তায় ঈদের পরের দিন থেকে ৩০ জন আনসার, ৩০ জন স্কাউট, ২৭ জন মেরিন ক্যাডেট নদীবন্দরে সবসময় তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ওই সময়ে প্রতিনিয়ত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নদী বন্দর এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান করবেন।
বর্ষাকাল হওয়ায় এবারের ঈদ যাত্রায় আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে এরইমধ্যে লঞ্চের মাস্টারদের কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারমধ্যে দুযোগপূর্ণ আবহাওয়া পরিহার করে সিগনাল মেনে নৌযান চালনা এবং নৌযানে-নৌযানে প্রতিযোগিতা পরিহার করার জন্য মাস্টারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট প্রত্যায়ন ছাড়া কোনো মাস্টার কোনো নৌযান চালাতে পারবে না এবং মাস্টার ব্রিজে যাত্রী না নেওয়ার জন্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নদী বন্দরে সার্বিক নিরাপত্তায় পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল সদর নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, নৌ-পথে সরকারি সব সিদ্ধান্ত কার্যকরের পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপত্তায় সদা সচেষ্ট থাকবে নৌ-পুলিশ। বিশেষ করে নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি, অজ্ঞানপার্টি, ছিনতাইকারীসহ দুষ্কৃতিকারীদের প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে আমরা রয়েছি। এবারে নদী বন্দর এলাকায় প্রকাশ্য ধুমপান ও হকারদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
নাশকতারোধে বরিশাল নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের দু’টি আর্চওয়ে গেট ও কয়েকটি মেটাল ডিটেক্টর মেশিন রয়েছে। তবে এর মধ্যে একটি আর্চওয়ে গেট নষ্ট রয়েছে। যদিও বিকল্পভাবে আর্চওয়ে গেট সংগ্রহের কথা জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।