মানসম্মত শিক্ষার জন্য ৩৬ সুপারিশ।।

0
449

Sharing is caring!

নিউজ ডেস্ক:   সরকারি কলেজে জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হলে অনেকেই উচ্চমাধ্যমিকে সেই ফল ধরে রাখতে পারে না। এ কারণে শিক্ষার্থীরা এসব কলেজে ভর্তি হতে চায় না। অথচ সুযোগ-সুবিধা এবং প্রশিক্ষিত ও দক্ষ শিক্ষক আছেন এসব কলেজে। শিক্ষার্থী আকৃষ্ট না হওয়ায় প্রতি বছর শত শত আসন খালি থাকে সরকারি কলেজে।

- Advertisement -

অনার্স-স্নাতক এবং মাস্টার্স পর্যায়েও শিক্ষার্থী ভর্তি এবং পরীক্ষার ফলে এমন করুণ হাল বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতি উত্তরণে রোববার ঢাকায় অনুষ্ঠিত সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ সম্মেলনে ৩৬ দফা সুপারিশ গৃহীত হয়েছে। অন্যদিকে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে কলেজে মনিটরিং জোরদার, প্রাইভেট কোচিং নিয়ন্ত্রণ এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি নিশ্চিতসহ ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন জানান, ফাঁসরোধে আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কেন্দ্রেই ছাপানো হবে।

রাজধানীর আজিমপুর সরকারি গার্লস স্কুল ও কলেজ মিলনায়তনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিকালে সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সরকারি কলেজগুলোকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ছোট দেশ হিসেবে সমস্যা-সংকট থাকবে। কিন্তু সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে নতুন প্রজন্মকে বিশ্বমানের শিক্ষা দিতে হবে।

তিনি অধ্যক্ষদের উদ্দেশে বলেন, যিনি যেখানে আছেন তাকে সেটার ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। শিক্ষকদের বলে দেবেন, যে কোনোভাবে ক্লাস নিয়ে চলে আসার মধ্যে সার্থকতা নেই। ব্যর্থতার জন্য প্রত্যেককে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের কাজ কলেজে শিক্ষা দেয়া। কিন্তু অনেকেই আসেন অফিসার হতে। তা না পারলে ঢাকায় পোস্টিং চান। দৈনিক আমি ১০০ জনকে সাক্ষাৎ দিলে ৮০ জনই পাই এ তদবিরের।

সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয় এ সম্মেলন। এতে ৩১৮ কলেজের অধ্যক্ষ যোগ দেন। প্রথম পর্বে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা ও কৌশল জানানো হয় অধ্যক্ষদের। এরপর তাদের বিভাগওয়ারী ভাগ করে গ্রুপ আলোচনার মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষার জন্য ৩৬টি সুপারিশ তুলে আনা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নিয়মিত হাজিরা নিশ্চিত; সময় মতো শ্রেণীকক্ষে গমন; সাপ্তাহিক/পাক্ষিক/টিউটোরিয়াল পরীক্ষা নেয়া; দুর্বল শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে পৃথকভাবে পরিচর্যা; নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য ৩০ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক নিয়োগ; ক্লাস চলাকালীন প্রাইভেট-কোচিং পুরোপুরি বন্ধ; শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ/পদায়ন; প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ; একাডেমিক ও প্রশাসনিক মনিটরিং; সুসজ্জিত ও আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ল্যাব ও শ্রেণীকক্ষ নিশ্চিত এবং শিক্ষক-অভিভাবক-শিক্ষার্থী নিয়মিত মতবিনিময় সভার আয়োজন।

এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বৃদ্ধি ও উপস্থিতি নিশ্চিত, ঝরেপড়া রোধ, শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন সেবা সহজ করা, বিশেষ করে শিক্ষকদের সম্মানজনক স্বতন্ত্র পেস্কেল প্রদান এবং শিক্ষকদের বদলির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করার সুপারিশও উঠে এসেছে।

মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে সরকারের জন্য তিনটি করণীয় সুপারিশ করেছেন অধ্যক্ষরা। তা হচ্ছে- আইসিটি বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শ্রেণীকক্ষে মালটিমিডিয়ার ব্যবহার নিশ্চিত। এছাড়া কলেজকে দুটি করণীয় নির্দেশ করা হয়েছে।

উভয়পর্বের আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন ও মো. আলমগীর। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সচিব ড. মোল্লা জালালউদ্দিন অধ্যক্ষদের ১৫ নির্দেশনা দেন। এসব নির্দেশনার সঙ্গে শিক্ষকদের দেয়া সুপারিশের কয়েকটির মিল রয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে পরিচালক অধ্যাপক সামসুল হুদা, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আইকে সেলিমউল্লাহ খোন্দকার প্রমুখ বক্তৃতা করেন। উম্মুক্ত পর্বে বিভিন্ন অধ্যক্ষ কলেজের নানা সমস্যা তুলে ধরেন। শেষ কর্মদিবস থাকায় অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ হাসিনা বানু ও অধ্যক্ষ এনএম শাহজাহান সরকারকে শিক্ষামন্ত্রী ফুলের শুভেচ্ছা জানান।

এতে সোহরাব হোসাইন বলেন, ফাঁস রোধে আগামী এসএসসি পরীক্ষা থেকে কেন্দ্রেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। অধ্যাপক সেলিমউল্লাহ খন্দকার বলেন, জাতীয়করণ করা কলেজের শিক্ষকদের জন্য পৃথক চাকরি বিধিমালা তৈরি করা প্রয়োজন।

সম্মেলনে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করায় রাজশাহী সরকারি কলেজকে দেশের সেরা মডেল কলেজ ঘোষণা করা হয়।

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ব্যঘাত ঘটার অভিযোগ : এদিকে সম্মেলনের স্থান আজিমপুর সরকারি গার্লস স্কুল ও কলেজ এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের কিছুটা ব্যঘাত সৃষ্টি হয়েছে অভিযোগ উঠেছে। রোববার এসএসসির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। ফলে একদিকে চলে পরীক্ষা, অন্যদিকে সম্মেলন। এ ব্যাপারে অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা না করেই অনুষ্ঠান করার চেষ্টা করা হয়েছে। অধ্যক্ষদের গাড়িগুলো পরীক্ষা শুরুর বহু আগেই অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করে। ফলে পরীক্ষার্থীদের কষ্ট হওয়ার কথা নয়।

(Visited 4 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here