৬ বছর আগে পরিবার থেকে হারিয়ে যাওয়া মানসিক ভারসম্যহীন শরিফা খাতুন ফেসবুকের কল্যাণে ফিরে পেল স্বজনদের :

0
511

Sharing is caring!

শরিফা খাতুন মানসিক ভারসম্যহীন।বয়স অনুমান ৫৫ বছর। জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের গেটের বাইরে কখনো এই গাছ তলায়, কখনো ঐ গাছ তলায় তাকে দেখা যেত। আমার আর্দালী বিষয়টি আমার নজরে আনে। তাকে পাঠাই শরিফার একটি ছবি তুলে আনতে। ছবিটি আরেকজন স্টাফের ফেসবুক আইডি থেকে Jamalpur: problems and prospects ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দেয়াই। সাথে সাথে সমাজসেবার ডিডি এবং হাসপাতালের এডি সাহেবকে ফোনে এবং ফেসবুক কমেন্টে মহিলার চিকৎসার ব্যবস্হা করতে বলে দেই। এতে এগিয়ে আসেন শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা জসিম সাহেব। তাকে পরামর্শ দেই নতুন কয়েকসেট পোশাক কিনে কাউকে দিয়ে শরিফাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নতুন কাপড় পড়িয়ে হাসপালে ভর্তি করতে। পরামর্শ মত তিনি তাই করেন। কিন্তু পরদিন সকালে দেখি শরিফা আবার হাসপাতালের সামনে গাছতলায়। আবার ডাকলাম জসিম সাহেবকে। তিনি জানালেন, এর আগেও তিনি মহিলাকে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু হাসাপাতালের লোকজন তেমন আন্তরিকতা দিয়ে তাকে দেখেননি আবার শরিফাও হাসপাতালে থাকেনি। জসিম সাহেব জানালেন গতকাল তিনি শরিফার সাথে কথা বলে তার মুখ থেকে তিনটি শব্দ পেয়েছেন: একটি তার নাম ‘শরিফা’ অপর দুটি ‘সাতক্ষীরা’ আর ‘তালা’ । তার ধারণা হলো শরীফার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায়। তিনি তালা উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তার সাথে কথা বললেন। তালার সমাজসেবা কর্মকর্তার মনে পড়ে নিখোঁজ হওয়া তার এক বিধবাভাতাভোগীর কথা। নাম তার শরিফা। তিনি ছুটলেন শরিফার বাড়িতে। পেলেন শরিফা খাতুনের বড় মেয়ে সাবিনাকে। ফেসবুক পোস্টের ছবি দেখালেন মেয়ে সাবিনাকে। সাবিনা দীর্ঘ ৬বছর আগে তার হারিয়ে যাওয়া মাকে চিনতে পারলেন। তিনি ছুটে আসলেন জামালপুরে। ছয় বছর পর হারিয়ে যাওয়া মা ও মেয়ের আলিঙ্গনে এক হৃদয়স্মর্শী দূশ্যের অবতারণা হয়। শরীফাকে এবং মেয়ে সাবিনাকে দেখতে হাসপাতালে গেলাম। মেয়ের সথে কথা বলে আরও এক করুন কাহিনী জানলাম। মায়ের সাথে তার আরও দুটি অবুঝ বোন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সেই ছয় বছর আগে। তারাও আর বাড়ি ফেরেনি। সাবিনার স্বামী অত্যন্ত গরীব । শ্রমিকের কাজ করে। কাজ ফেলে তার পক্ষে আসা সম্ভব হয়নি। তাই মাকে ( সাবিনার শাশুড়ি) পাঠিয়েছেন সাবিনার সাথে। হাসপাতালে ডাক্তারদের বলে ওদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্হা করে দিলাম। নগদ ৫০০০ টাকা দিলাম। বললাম সাবিনা ও তার শাশুড়ীকে অন্তত একসেট কাপড় ও কম্বল কিনে দিতে। বিকালে শুনলাম আমি খোজ খবর নেয়ার কারণে ডাক্তররা শরীফার ভাল যত্ন নিয়েছেন। শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা জসিম সাহেবও প্রতিদিন শরিফা খাতুনের খোজ খবর নিচ্ছেন। ঘটনাটি জানালাম জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরাকে। আশা করি শরিফাকে কিছুটা চিকিৎসা দিয়ে তাকে বাড়ি পৌছে দেয়া যাবে। ডাক্তার ও নার্সদের যত্নে শরিফা খাতুনের পচঁনধরা পায়ের ঘা শুকাতে শুরু করেছে। শুনেছি হাসপাতালের এডি ডা: আল আমীন সাহেব নিয়মিত শরীফার খোঁজখবর নিচ্ছেন। ধন্যবাদ জানাই শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা জসিম সাহেব এবং হাসপাতালেরে এডি, ডাক্তার ও নার্সদের । শরিফাকে সাতক্ষীরা পৌঁছে দেয়া হলে বাকীটা জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরা দেখবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।
————–জেলা প্রশাসক, জামালপুর।

- Advertisement -

15181215_1877287232507109_3089794347090731553_n15235946_1877287309173768_1086613095118318793_o

(Visited 2 times, 1 visits today)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here