মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : চতুর্ভূজ প্রেমের বলী হয়েছেন মৌলভীবাজার রাজনগরের কলেজ ছাত্রী শাম্মী বেগম (১৮)। ঘাতক প্রেমিকরাই পরিকল্পিতভাবে তাকে জঙ্গলে নিয়ে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হত্যার পরিকল্পনাকারী ও হত্যায় অংশ নেওয়া ৪ প্রেমিককে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে হাজিরের পর স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
রবিবার (২১ মে) মৌলভীবাজার আদালতে মামলার প্রধান আসামী আলকুম হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানান রাজনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শ্যামল বণিক।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের কাছাড়ী করিমপুর গ্রামের হারুন মিয়ার মেয়ে তারাপাশা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্রী শাম্মি বেগমের সাথে (১৮) প্রেমের সম্পর্ক ছিল ওই এলাকার গনি মিয়ার ছেলে আলকুম মিয়ার (২৩)। এরপর ওই এলাকার তমজির আলীর ছেলে বরকত হোসেন সুমন (ওরফে বক্কর) (২৫), মকবুর মিয়ার ছেলে মো. দিপু মিয়া (২৫) এর সাথে। এরপর সর্বশেষ মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সুনাটিকি গ্রামের ছকা মিয়ার ছেলে মাজহার মিয়ার (২৫) সঙ্গেও প্রেমের জালে জড়িয়ে পড়েন শাম্মী। একাধিক প্রেমে জড়িয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ হন প্রথম প্রেমিক আকলুম মিয়া। এনিয়ে আলকুম মিয়ার সঙ্গে শাম্মী আখতারের কয়েক বার ঝগড়াও হয়। ফোনে আলকুম মিয়া হত্যার হুমকিও দেয় শাম্মীকে।
নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন অর্থাৎ গত বুধবার সন্ধ্যায় এ নিয়ে ওই ৪ জন ঘাতক প্রেমিক কাছাড়ি এলাকায় বসে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যার পরিকল্পনা আসে মাজহারের মাথা থেকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বরকত হোসেন সুমন দুপুরে তাদের বাড়িতে গিয়ে একবার দেখে আসে। দিপু ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শাম্মী বেগমের বাড়িতে গিয়ে ওর মায়ের সঙ্গে গল্প করতে থাকে। রাত সাড়ে ৮ টার সময় শাম্মী বেগমের মোবাইল ফোনে একটি মিসডকল আসে। এরপর সে টয়লেটে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি।
পুলিশ আরও জানায়, লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশ শাম্মীর বাবা হারুন মিয়ার কথার ভিত্তিতে প্রথমে বরকত হোসেন সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মো. দিপু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার বক্তব্যে অসংলগ্নতা পাওয়ায় তাদের আটক করা হয়। একই সময়ে শাম্মীর সহপাঠিকে দেয়া মোবাইল ফোনের হোয়াটসআপের একটি কথার সূত্রধরে ওই এলাকার আলকুম মিয়া (২৩) কে আটক করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আলকুম হত্যার ঘটনা স্বীকার করে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যার পরিকল্পনাকারী মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সোনাটিকি গ্রামের ছকা মিয়ার ছেলে মো. মাজহার মিয়াকে শুক্রবার রাতেই পুলিশ তার বাড়ি থেকে আটক করে। নিহত শাম্মী আখতারের বাবা ওই ৪ জনকে আসামী করে রাজনগর থানায় হত্যা মামলা (নং-২২) দায়ের করেন।
এদিকে শনিবার তারাপাশা স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা স্থানীয় বাজারে শাম্মী হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে ছিলেন অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম খান, ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ মো. বশারত আলী, শিক্ষক মোবারক হোসেন, শিক্ষক শওকতুজ্জামান, আকবর আলী, টেংরা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান রিপন মিয়া, রইছ আলী প্রমুখ।

















